ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে গোলবন্যায় ভাসালো বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সিঙ্গাপুরের মেয়েদের বিপক্ষে ৮-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে সাবিনা খাতুনরা। এর আগে প্রথম ম্যাচেও ৩-০ গোলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে গোল হজম করেনি একটিও।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৬তম মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা তহুরা ঝলক দেখান প্রতিভার। সাবিনার উড়িয়ে দেওয়া কর্নার থেকে মাসুরা পারভিনের হেডে ফিরতি বলে গোল করে তহুরা এগিয়ে দেন বাংলাদেশকে।
আরও পড়ুন— নেপালকে উড়িয়ে সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
২০২৩ সালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের আজই ছিল শেষ ম্যাচ। বছরব্যাপী নানা ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনায় থাকা নারী ফুটবলের সমাপ্তিটা হয়েছে দারুণ। সফরকারী সিঙ্গাপুরের জালে দুই ম্যাচে ১১ বার বল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আজ ৮ গোলের মধ্যে জোড়া গোল করেন তহুরা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমা। একটি করে গোল করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, বাংলাদেশি বংশোদ্ভত সুমায়া মাতসুমি ও জুনিয়র শামসুন্নাহার।
প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ তিন গোলে এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে আরো পাঁচ গোল করে স্বাগতিকরা। আজকের ৮ গোলের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল পঞ্চমটি। ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা ৬২ মিনিটে বক্সের মধ্যে বাঁ পায়ে অসাধারণ শটে বল জালে পাঠান। এর পাঁচ মিনিট আগে হওয়া গোলে অবদান ছিল ঋতুপর্ণার। বাম প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার মাইনাস তহুরা দৌড়ে গিয়ে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন। একই লাইনে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সানজিদা শট নিয়ে গোল করেন। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ম্যাচজুড়ে বেশ কয়েকটি গোল মিস করেন। পরে তিনি অবশ্য ৭৪ মিনিটে গোলের দেখা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন— বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন, যে পথে যাবেন সাবিনারা
গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন তহুরা। ৭০ মিনিটে ঋতুপর্ণার পাসে তহুরা গোল করলেও অফ সাইডে বাতিল হয়। ৭৫ মিনিটে স্কোরলাইন ৬-০ হওয়ার পর বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটু বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনেন। গোলরক্ষক রুপ্না, ফরোয়ার্ড তহুরা, মারিয়া ও শামসুন্নাহারকে উঠিয়ে নেন। খেলোয়াড় বদল হলেও বাংলাদেশের গোল উৎসব থামেনি। ৮৬ মিনিটে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানি ফুটবলার সুমাইয়া মাতসুমি বাংলাদেশের হয়ে প্রথম গোল করেন। ইনজুরি সময়ে শামসুন্নাহার একটি গোল করলে স্কোরলাইন ৮-০ হয়।
প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন। আজ দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথমার্ধেই জোড়া গোল করেন এই ফরোয়ার্ড। ১৬-১৮ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশ দুই গোল পায়। ১৬ মিনিটে সাবিনার ফ্রি কিক বক্সের মধ্যে আফিদার ভলিতে মাসুরা পারভীন হেড করেন। তহুরা আরেক হেডে বল জালে পাঠান। এক মিনিট পরেই অধিনায়ক সাবিনার নেওয়া কর্নার সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল পোস্টের সামনে পড়ে। ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা ঋতুপর্ণা চাকমা প্লেসিংয়ে ২-০ করেন। ২৪ মিনিটে বক্সের মধ্য থেকে সানজিদার শট সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক গ্রিপে নিতে পারেননি। সামনে থাকা তহুরা বল জালে পাঠান।
আরও পড়ুন— ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা পাবে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নরা
সিঙ্গাপুর ম্যাচজুড়ে তেমন আক্রমণ করতে পারেনি। প্রথমার্ধের ১৪ মিনিটে নুর সাওয়াজিনির শট রুপ্না ভালোমতোই সেভ করেন। দ্বিতীয়ার্ধে তেমন কিছুই করতে পারেনি সফরকারী দল। আজকের ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সিঙ্গাপুরের জার্মান লিগে খেলা ফুটবলার ডানেলে। সতীর্থরা তাকে সেভাবে বল যোগান দিতে পারেনি। পাশাপাশি বাংলাদেশের ডিফেন্ডার আফিদা তাকে ভালোমতো আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এর আগে কাগজে কলমে শক্তিশালী সিঙ্গাপুরকে প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে নামার আগে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের কোচ। সাবিনারাও ছিলেন বেশ সতর্ক। এতোটাই যে ম্যাচে ছাড় দেননি একটুও। শুরু থেকে সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়ে দেশবাসীকে আনন্দে ভাসালো বাংলার মেয়েরা।