প্রথম দুই ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আজ মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখেছেন দুই টাইগার ওপেনার। তাতে ব্যর্থ হয়েছে দলও। এক শামীম পাটোয়ারী ছাড়া আর কেউই আইরিশ বোলারদের সামনে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। রীতিমতো অসহায় আত্মসর্মপণ করেছেন সাকিব-শান্তরা। তবে এদিন ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একাই লড়েছেন শামীম, তার ব্যাটে ভর করেই লড়াই করার পুঁজি পেয়েছে স্বাগতিকরা।
১৯ ওভার ২ বল খেলে ১২৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। যেখানে হাঁফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন শামীম হোসেন।
৬২ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর একশো হওয়া নিয়ে শংকা জাগে। সেখান থেকে শামীম একা লড়ে গিয়ে ১২৪ রানের পুঁজি এনে দেন। ১৯.২ ওভারে শামীমের আউটে বাংলাদেশ অলআউট হয়। সর্বোচ্চ ৫১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শেষে দারুণ সঙ্গ দেন নাসুম। দুজনের ৩৩ রানের জুটি বাংলাদেশকে রক্ষা করে। নাসুম ১৩ রান করেন। এ ছাড়া রনি ১৪ ও তাওহীদ ১২ রান করেন। আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরের মুখ দেখেননি। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৭ বোলার বল করে প্রত্যেকেই উইকেট নিয়েছেন। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন অ্যাডেয়ার। ২ উইকেট নেন অভিষিক্ত ম্যাথু হ্যামপ্রেজ।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
আগের ম্যাচেই রেকর্ড গড়া ব্যাটিংয়ের পর আজ পুরোপুরি ব্যর্থ লিটন দাস। ইনিংসের প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে শুরু করলেও সেটা ধরে রাখতে পারেনননি। সাজঘরে ফিরেছেন দ্বিতীয় ওভারেই। অ্যাডায়ারের করা প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ছিল, খাট লেন্থের এই বল ডিপ পয়েন্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা ডকরেলের হাতে ধরা পড়েন লিটন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪ বলে ৫ রান।
লিটনের পর উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি শান্তও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শেষ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল, সেখানে ছক্কা হাকাতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি তিনি। তাতে মিড অফে ধরা পড়েন। এই টপ অর্ডার ব্যাটারের ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ বল। সেখানে তিনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন কেবল ৪ রান।
এরপর লিটনের পথেই হেটেছেন রনিও। তবে শুরুটা ভালো ছিল এই ওপেনারের। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ডীপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৪ রান। তার বিদায়ে ২৪ রানেরভ মধ্যেই টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটারকে হারাল বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন- আইরিশদের হারিয়ে টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয় টাইগারদের
লিটন-শান্তদের সঙ্গে এদিন ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন সাকিব আল হাসানও। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুল করতে গিয়ে হোয়াইটের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ রান। তার বিদায়ে পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
সাকিবের পর বাংলাদেশের সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি ছিল তাওহিদ হৃদয় এবং শামিম হোসেনের। কিন্তু ইনফর্ম হৃদয় এদিন দলের হাল ধরতে পারেননি, বরং বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। হোয়াইটের সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলটি লেন্থ ডেলিভারী ছিল, সেখানে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল সোজা উপরে উঠে যায় আর সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি হ্যারি ট্যাক্টর। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১২ রান। হৃদয়ের বিদায়ে দলীয় অর্ধশতক স্পর্শ করার আগেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এমন বিপর্যয়ের মুখে উইকেটে আসেন রিশাদ হোসেন। অভিষিক্ত এই স্পিনারের আসল কাজটা বল হাতে তবুও এদিন দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও লড়াই করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় বলেই রানের দেখা পেয়েছেনব তিনি। সেটাও আবার বোলারের মাথার ওপর দিয়ে স্টেট ড্রাইভে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে। এমন দুর্দান্ত শুরুর পরও নিজের অভিষেক ইনিংসটা খুব বেশি লম্বা করতে পারেননি। দশম ওভারের প্রথম বলে হ্যাম্পেয়ার্সের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন ৮ রান।
আরও পড়ুন- েমুশফিক ঝড়ের পর বৃষ্টির দাপটে পরিত্যক্ত দ্বিতীয় ওয়ানডে
রিশাদের এক বল পরই সাজঘরে ফিরেছেন তাসকিন। বিপর্যয়ের মুখে অনেকবারই তার ব্যাটে লড়াই করার পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আজ সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে ডাক খেয়ে ফিরেছেন তাসকিন।
প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই ৭ ব্যাটারকে হারিয়ে অলআউটের শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা। তবে সেই শঙ্কার মেঘ কেটেছে শামিমের ব্যাটে। নাসুমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। এই দুইজনের জুটিতে কিছুটা হলেও বিপর্যয় সামাল দেয় বাংলাদেশ। ১৭ বলে ১৩ রান করে নাসুম বিদায় নিলে ভাঙে ৩৩ রানের জুটি।
ব্যাটারদের এই আসা-যাওয়ার মাঝেও এক প্রান্ত আগলে ধরে লড়াই করেছেন শামিম। তার দৃঢ়তায় ১৬ ওভারেই দলীয় শতক পূর্ণ করে দল। এরপর ১৯তম ওভারে ব্যাক্তিগত হাঁফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৪০ বলে। তবে ফিনিশিংটা ঠিকমতো করতে পারেননি। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ৫১ রান করে শামীম ফিরলে ১২৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।