লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এলকে এইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৮২জন। কিন্তু এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার জন্য তারা ১৩১ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের জন্য বোর্ডে আবেদন করেছে। অতিরিক্ত এ শিক্ষার্থীদের পাঠদান হয়েছে অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ে। শুধু এই বিদ্যালয়টি নয়; এটি সহ প্রায় ৩৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে অভিভাবকদের বাড়তি টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, রায়পুর শহরের নতুনবাজারের আল আমিন একাডেমির ৪, মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ৬ ও এলকে এইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের চার জন এসএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়া নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন। তাদের অভিভাবকরাও ভীষণ উদ্বিগ্ন।
প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও জসিম উদ্দিন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিন প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ঝামেলায় পড়েছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সোমবারের মধ্যেই সমাধান করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসময় এ বিষয় নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ জানান তারা।
আরও পড়ুন— দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করানোর এ প্রক্রিয়া ধরেছে শিক্ষা বোর্ড। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু কিছু অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। কিন্তু নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে অনুমোদন নেই, এমন বিদ্যালয় ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না। ভর্তি হওয়ার আগে অভিভাবকদের খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।’
অননুমোদিত বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের বিষয়ে এলকে এইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের দাবি, শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিয়েই এত দিন তারা অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীপ্রতি বাড়তি মাত্র ৫’শ টাকা করে নেয়া হতো। বেশি নেয়া হয়নি।
অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুধু এলকে এইচ উকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ই নয়, উপজেলার আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেখিয়ে নিবন্ধন করায়। এ জন্য বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এত বছর ধরে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
আরও পড়ুন— খুলনায় জুট মিলের গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এত দিন তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী নিবন্ধন করাত। বোর্ড নানা সময় বিভিন্ন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এ কারণে আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, শর্ত পূরণ না করার কারণে রায়পুর উপজেলায় অর্ধ-শতাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদান করার অনুমতি নেই। তবে এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকই শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন। পরে অনুমোদন আছে, এমন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন ও এসএসসি পর্যায়ে ফরম পূরণ করানো হয়। আর এই সুযোগ নিচ্ছে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এলকেএইচ উপকূলীয় ছাড়াও এ তালিকায় আছে চরবংশী আজিজিয়া, চরলক্ষী জনতা, রচিম উদ্দিন, মিতালি বাজার মডেল ও মীরগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ফরম পূরণ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে। শেষ হয় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ১ম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসএসসিতে ফরম পূরণের জন্য এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদষালয়ে নিজস্ব শিক্ষার্থী ছিল ৮২ জন। তারা অন্য চারটি বিদ্যালয়ের আরও ৪৯ সহ মোট ১৩১ শিক্ষার্থীর নিবন্ধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেছে।
আরও পড়ুন— বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সীমা লঙ্ঘন না করার আহ্বান সরকারের
চরবংশী আজিজিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থী ৭৫ জন, তারা আরও ৩ টি বিদ্যালয়ের ৫৫ জনসহ মোট ১২৭ জন শিক্ষার্থীর নিবন্ধন জন্য আবেদন করে। রচিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে নিজস্ব শিক্ষার্থী ৬৪ জন, প্রতিষ্ঠানটি অন্য ২টি বিদ্যালয়ের ৩৯ জনসহ ১০৩ শিক্ষার্থীর নিবন্ধনের আবেদন করেছে।
অন্যদিকে চরলক্ষি জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিজস্ব শিক্ষার্থী ৬৮ জনহ আরো ১ টিতে ১৮ জনসহ মোট ৮৬ জন শিক্ষার্থী এবং মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ৭৬ জন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন।
এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে তারা নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করায়। শিক্ষার্থীপ্রতি ২ হাজার টাকা করে বাড়তি নেন। চার-পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তবে এখন বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে এ কাজ করবেন না। আমাদের চারজনসহ রায়পুরের মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, আলআমিন একাডেমির ১৪ জন পরীক্ষার্থীর নিবন্ধনে সমস্যা হওয়া তা দেরি হচ্ছে। কুমিল্লা বোর্ডের সোমবার পরীক্ষার্থীর বিষয়ে জানাবেন।
অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ও নিবন্ধনের এ কার্যক্রম অবৈধ বলে স্বীকার করেছেন আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এ কাজ করে আসছে। এ জন্য তাঁরাও নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করেছেন। এখন বোর্ড থেকে কোন সমস্যা হয়নি।’
আরও পড়ুন— রায়পুরে বাসটার্মিনাল এলাকায় আনসার-পুলিশের ‘বাস পাহারা’
রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা সাইফুল হক বলেন, ‘নতুন বাজারে অবস্থিত আলআমিন একাডেমি নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিনিনা। আমি কখনও পরিদর্শও করিনি। অফিস সহকারি জানিয়েছে তিন প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন পরীক্ষার্থী রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম পূরন নিয়ে জটিলতা বা শঙ্কায় রয়েছেন। সোমবার বলা যাবে।’
জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জামাল নাসের মুটোফোনে বলেন, ‘অনুমোদিত নয়, এমন বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না। পাশাপাশি তথ্য গোপন করে অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণের সুযোগ নেই। বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা না দিতে পারলে সকল দায়ভার স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের। আমরা জববাদিহি নেব বোর্ডের অধিনে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কাছ থেকে। বেসরকারিগুলো দেখবে স্থানীয় প্রশাসন।