লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার (এসএসসি) ফরম পূরণে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার-নির্ধারিত ফি দুই হাজার ১৪০ টাকা। অথচ বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলো তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। উপজেলার প্রায় ৪০টি কেজি স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এমপিভুক্ত স্কুল ও মাদরাসা নামে প্রধান শিক্ষাকদের সাথে যোগসাজসে পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে অতিরিক্ত ফি না নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিলম্ব ফি ছাড়া গত ৭ নভেম্বর/২৩ ফরম পূরণের শেষ দিন ছিলো।
আরও পড়ুন— জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে আ.লীগঃ ইসি
মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। পরীক্ষা ফরম পূরণে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের জন্য বোর্ড ফি নির্ধারণ করে দেয় ২ হাজার ২০ টাকা। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ১৪০ টাকা।
রায়পুর এলএম পাইলট মডেল এবং চরবংশী আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পৃথক দুই কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে পরীক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয় ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা ফি ধার্য করেছেন। অর্থ-সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের পক্ষে ওই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ জন প্রধান শিক্ষক জানান, উপজেলায় ৫৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ২৮টি ও মাদ্রাসা ২৩টি) রয়েছে। তার মধ্যে বেসরকারি প্রিন্সিপাল কাজি ফারুকি স্কুল এন্ড কলেজ, এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়, মীরগন্জ উচ্চ বিদ্যালয়, রচিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, চরলক্ষি জনতা, কেরোয়া মানসুরা ও আলিম মাদরাসা, চরবংশী আজিজিয়া, জনকল্যান বহুমুখী এবং কাফিলাতুলি উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেছে। শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিলেও তারা চুপ রয়েছে।
আরও পড়ুন— তফসিলকে স্বাগত জানালেন ওবায়দুল কাদের
অভিভাবক দেলোয়ার হোসেন জানান, তাঁর মেয়ে এলকে এইচ উপকূলীয় উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করায় ফরম পূরণের টাকা দিতে পারছিলামনা। একপর্যায়ে তাঁর মেয়ের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো। পরে রাজনৈতিক নেতার ফোনে ফরম পূরন করা হয়।
অভিভাবক মাইনুদ্দিন খান বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণে দিগুণ বেশি টাকা ধার্য করেছে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে পারেনি। শিক্ষকেরা জাতির পথপ্রদর্শক। অথচ তাঁরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন।
আরও পড়ুন— ইঁদুর তাড়ানোর অভিনব উপায়
এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার-নির্ধারিত ফি-ই নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। তবে কোচিংসহ অন্যান্য খরচের জন্য পরে কিছু টাকা নেওয়া হবে। বাহিরের তিন বেসরকারি স্কুলসহ আমাদের পরীক্ষার্থী ১৩২ জন। শুধু আমার গরিব স্কুলটি চোখে পড়লো…? অন্য স্কুল চোখে পড়ছেনা?
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল হক বলেন, ‘একজন অভিভাবকও বেশি টাকা আদায়ের বিষয়টি জানাননি। বৈঠক করে শিক্ষকদের বোর্ড ফির বাইরে কোনো অর্থ না নিতে বলা হয়েছে। এর পরও কেউ অতিরিক্ত অর্থ নিলে নিদ্দিষ্ট করে বললে আমরা ব্যবস্থা নেব।’