লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় হায়দরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি মেঘনা নদী সংলগ্ন উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী খাল পাড় ঘেঁষে চলে গেছে। যা দিয়ে প্রতিদিন জালিয়ারচর, চরবংশী, চরআবাবিল, চরজালিয়া, চরইন্দ্রুরিয়াসহ কুমিল্লা ও চঁদপুর সীমান্তবর্তী সহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ পথচারী, কৃষক ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত। নদীভাঙনে সড়কটি সরু হয়ে ক্ষেতের আলে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সড়কটি। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর।
৮ বছর আগে একবার সড়কটি নির্মাণ হয় এবং গত তিন বছর সংস্কার না করার মাঝেই এ পথে মানুষ চলাচল করেছে। রাস্তাটি ভাঙতে ভাঙতে সরু হয়ে চলাচলে একেবারে অযোগ্য হয়ে পড়ে।
এদিকে, পথের দুইটি সাঁকো নদীতে যাওয়ার উপক্রম। তাই মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তার ওপরেই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দুটি সাঁকো। উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের এই রাস্তাটি সংস্কার ও রক্ষা না করা হলে শিগগিরই নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
আরও পড়ুন- উলিপুরে মাদরাসায় নিয়োগের আবেদন জমা নিতে গড়িমসি
সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে মেঘনা নদীর সংযোগ খালের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটির বেহাল দশা। স্থানীয় মানুষ বহুদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। একমাস আগে হাজার হাজার পথচারীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় সচেতন যুবক ও গ্রামের কয়েকজন ১০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে কাঠের বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। এতে কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমেছে। তবে পানি বাড়লেই এটিও নিমজ্জিত হয়ে পারাপার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে।
সমাজ সেবক মোঃ ফরহাদ ও সুলতান তালুকদার প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে চলাচলের জন্য ২০০ ফুটের বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণের ব্যাবস্থা করা হয়। এতে ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। রাস্তাটি সরিয়ে অন্যত্র দিয়ে দ্রুত সংস্কার না হলে দ্রুত নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে অঞ্চলটি (আশ্রয়কেন্দ্র)।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও বাবুল বলেন, এভাবে সব ভেঙে যাচ্ছে। আমরা দিন আনি দিন খাই। কোমর সমান পানি ভেঙে বাজার ও চাল নিয়ে পার হই। বয়স হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে নাই। কীভাবে বাঁচব এমন হলে?
আরও পড়ুন- স্কুলছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ছবি ধারণঃ যুব মহিলা লীগের সেই নেত্রী বহিষ্কার
স্থানীয় বাসিন্দা মোহন সিপাহী বলেন, ‘সাজু মোল্লার ঘাট থেকে আশ্রায়নকেন্দ্রের ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা। আগে বেড়িবাঁধের বাহিরে আশ্রায়নকেন্দ্র হওয়ায় সেটা সম্পূর্ণ নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এখান দিয়ে হাঁটাচলা মারাত্মক সমস্যা। রাস্তা না থাকায় জমির ওপর বাড়ীর পাশ দিয়ে হাঁটতে হয়।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমন সর্দার জানান, ৮ বছর আগে রাস্তা যা একটু করা হয়েছে, তা এখন ভেঙে নিচে নেমে গেছে। কিছুদিন আগে তো চলতেই পারতাম না। এখন পৃথক দুটি বাঁশের সাঁকো করে দেওয়ায় একটু চলাফেরা করা যায়। তবে সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেয়। তাহলে আমরা সহজে হাটবাজারে ও শিশুরা স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারবে।
স্থানীয় আবু সাঈদ আখন জানান, শুধু রাস্তা নয়, ধানের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত। ৮ বছর আগে এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। যা কোনো কাজেই আসে নাই। মেঘনা নদীর ভাঙনে এই অঞ্চলের মানুষগুলো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, ৩ বছর আগে ভাঙ্গা রাস্তাটি মেরামত করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেকের ফসলি জমি ও বাড়িঘর মেঘনা নদীতে হারিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সিমেন্টের ব্লক বা বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ না করে, তাহলে অচিরেই রাস্তাসহ নিরীহর বাড়িঘর নদীতে হারিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন- ‘আ.লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, প্রমাণিত’
এলজিইডির রায়পুর উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী সুমন মুন্সি প্রতিবেদককে জানান, মেঘনা নদীর রায়পুরের নদীভাঙন অংশে কার্পেটিং করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট আসলে রাস্তাটুকু নদীভাঙনকবলিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাসেল ইকবাল প্রতিবেদককে জানান, মেঘনা নদীর সংযোগ খালপাড় ভাঙনে রাস্তার অনেকটাই ভেঙে গেছে। জায়গাটি পরিদর্শন করেছিলাম। এক কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে আশ্রায়নকেন্দ্রের বাসিন্দারাসহ ৬টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি নদীভাঙন রোধে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কিছু নির্মাণ করলেই রাস্তা রক্ষা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখার প্রকল্পের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া যাবে। তবে তার আগে নদীভাঙন রোধে কিছু করা দরকার, যেটা লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড করতে পারে।’



