ঢাকাSaturday , 16 July 2022

উত্তরা গণভবনে শোভা পাচ্ছে ৪০ প্রজাতির ফুল

Link Copied!

নাটোর :

নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী ঐতিহাসিক স্থাপত্য যা (উত্তরা-গণভবন) নামে পরিচিত। প্রায় ৪৪ একর আয়তনের এই রাজবাড়ীর আঙ্গিনায় শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০ প্রজাতির ফুল। উত্তরা গণভবন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই রাজবাড়ীর অভ্যন্তরে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছগাছালি। বর্তমানে এই রাজবাড়ীটি প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলের বাসভবন হিসেবে ঘোষিত হলেও দর্শনার্থীদের জন্য ৮০ ভাগ এলাকা উম্মুক্ত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই এখানে রয়েছে রাজপরিবারের ব্যবহূত বেশ কিছু জিনিস। এর মধ্যে রাজকন্যার প্রেমপত্রসহ আরো অনেক কিছুই আছে।

১৯৫৬ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের সদস্যরা ভারতে চলে যান। ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজবাড়ীটিকে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন। সেই দিবসটি স্মরণীয় করতেই চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া গণভবন নামকরণের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়। এ উপলক্ষে দর্শনার্থীসহ বিদেশি অতিথিদের জন্য রাজবাড়ীটিকে নানা প্রজাতির ফুল ও গাছ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। এখানে রোপণ করা হয়েছে বিরল ও নানা প্রজাতির ফুলের গাছ। এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির ঔষুধি গাছ। এসব গাছ উত্তরা গণভবনের ভিতরের পরিবেশকে করে তুলছে বৈচিত্র্যময় ও নান্দনিক।

চলতি বর্ষা মৌসুমে গণভবনের ভিতরে শোভা পাচ্ছে বিরল ও নাম না জানা দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফুল। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপণ করা বিরল প্রজাতির হৈমন্তিসহ বর্ষায় ফুটে থাকা নান প্রজাতির ফুল এখন সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।

গণভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর থেকেই নজর কাড়ে গাছের ডালে ডালে সুশোভিত ফুল আর ফুল। রাজবাড়ীর মূল ভবনের পাশে গেলেই নাগলিঙ্গম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ নাকে লাগে। এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। ফুলটির পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। নয়নকাড়া ফুল আর বিচিত্র গোলাকার ফলের জন্য নাগলিঙ্গম সবার কাছে বাড়তি আকর্ষণের। নাটোরের উত্তরা গণভবনের রাজপ্রাসাদের দক্ষিণে কয়েক গজ এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই নাগলিঙ্গমের। এ ফুল দর্শনার্থীদের নজরকাড়ছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফুল নাগেশ্বরচাপা গণভবনের পরিবেশকে করেছে মনোমুগ্ধকর। ইটালিয়ান গার্ডেনে রয়েছে মার্বেল পাথরের চারটি মূর্তি ও একটি ফোয়ারা। ওই ফোয়ার দুপাশে প্রায় দেড়শ বছরের পুরাতন হোয়াট এলামন্ড ফুল শোভা পাচ্ছে। ওই ফোয়ারার প্রবেশ পথে শোভা পাচ্ছে হংসলতা ফুল। এ গার্ডেনে রয়েছে শোভাবর্ধনকারী জাপান থেকে আনা লাল রঙের হাইডেন্ট। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সাদা, বেগুনী ও গোলাপী রঙের চেরি ফুল।

গ্রান্ডমাদার হাউসসহ রাজ প্রাসাদ চত্বরে শোভাভর্ধন করছে গ্যালথোনিয়া, এগপ্লান্ট, ম্যাগনেসিয়া, রাধা চূড়া, পারিজাত, রঙ্গন, সাদা মসুন্ডা, ডানথাস, নয়নতারা, কাঁঠালচাপাসহ নানা প্রজাতির ফুল। গণভবনের চারপাশে জিনিয়া ও রঙ্গন ফুলের রং গণভবনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলছে।

গণভবনের কর্মরত গণপূর্ত বিভাগের মোবারক ও আনোয়ার হোসেন গণভবনে মালির কাজ করেন। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে দিনভর বিভিন্ন ফুলের গাছ রোপণসহ পরিচর্যার কাজ করেন। গণভবনের মধ্যে বিদেশি জাতের ফুলের গাছই বেশি।

শীত মৌসুমে চারদিকে ফুলে ফুলে ভরে যায়। তবে বর্ষা মৌসুমেও অনেক গাছের ফুল ফোটে। এবার হৈমন্তি গাছেও ফুল ফুটে রয়েছে। নাগলিঙ্গম, নাগেশ্বর, হংসলতা, এগপ্লান্ট, ম্যাগনেসিয়া, রাধা চূড়া, পারিজাত, রঙ্গন, সাদা মসুন্ডা, ডানথাস, নয়নতারা, স্থলপদ্ম বর্ষা মৌসুমে ফোটে। এ কারণে দর্শনার্থীরা গণভবনে এসে আনন্দ পায়।

উত্তরা গণভবনের হিসাব সহায়ক নূর মোহাম্মদ বলেন,  দিঘাপাতিয়া রাজা দয়ারাম রায়ের চতুর্থ বংশধর রাজা প্রমোদ নাথ রায় খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তার সময়ে বিদেশ থেকে কিছু বিরল প্রজাতির ফুল, ফল আর ঔষুধি গুণাগুণের গাছ এনে রোপণ করা হয়। রাজার প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল বসন্ত আর গ্রীষ্মের এসব ফুল। উত্তরা গণভবনে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০ প্রজাতির ফুল গাছ রয়েছে। এসব ফুল গাছের অনেকগুলোই বিরল প্রজাতির। এর মধ্যে রয়েছে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে রোপণ করা হৈমন্তি।

উত্তরা গণভবনের সহকারী ব্যবস্থাপক খায়রুল বাসার বলেন, এবার ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া গণভবনের নামকরণের পঞ্চাশ বছর পুর্তি উপলক্ষে গণভবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলা হয়। এসময় দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ হাজার ফুলের চারা রোপণ করা হয়। এসব রোপণকৃত ফুল গাছে ফুল শোভা পাচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য গণভবন চত্বরে রোপণ করা হয়েছে ভেষজ গাছ।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, উত্তরা গণভবনকে সৌন্দর্য বাড়াতে ভেষজ উদ্ভিদসহ নতুন নতুন ফুলের চারা রোপণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিরল প্রজাতির ফুল ও ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের অক্টোবরে ১০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে নাটোরের উত্তরা গণভবনের ২০ ভাগ জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত ছিল। পরে টিকিটের মূল্য ২০ টাকা করা হলেও দর্শনার্থীদের জন্য ২০ ভাগের বেশি উম্মুক্ত ছিল না।

সমপ্রতি দর্শনার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে মিনি চিরিয়াখানা ও সংগ্রহশালার পাশাপাশি হাউস লেক, রাণীমহল ও আম্রকানন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে মূল প্যাসেল এখনো উম্মুক্ত করা হয়নি।

শীর্ষ সংবাদ ডেস্কঃ

শীর্ষ সংবাদ ডেস্কঃ

প্রতিবেদক

ঢাকা

সর্বমোট নিউজ: 648

Share this...

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০