সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বেড়ানোর নাম করে রাষ্ট্রবিরোধী বৈঠক করার অভিযোগে আটক বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৩১ জন শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আটক ৩৪ জনের মধ্যে ৩২ জনের পাঁচ হাজার টাকা বন্ডের মাধ্যমে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। অপর দুইজন শিশু হওয়ায় তাদের শিশু আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে।
বুধবার (২ আগস্ট) দুপুর ১টায় সুনামগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালত তাদের জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ তৈয়বুর রহমান বাবুল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আজ আমরা জামিন আবেদন করি। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন, সরকার পক্ষের কথাও শুনেছেন। ইতোমধ্যে রিমান্ডের আবেদন এসেছিল। আদালত রিমান্ডের শুনানিও করছেন। বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্ট হয়ে প্রত্যেক আসামিকে ৫ হাজার টাকার বন্ডে জামিন দিয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন শিশু আছে। এই শিশুদের জন্যও আমরা জামিনের প্রার্থনা করেছি। শিশুদের বিষয়ে শুনানি হবে শিশু আদালতে। আমরা আজকেই শুনানি করব। আশা করি, আমরা ন্যায়বিচার পাবো।’
আরও পড়ুন- টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাওয়া বুয়েটের ৩৪ শিক্ষার্থী আটক
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকাঘাট থেকে রবিবার (৩০ জুলাই) সকালে একটি নৌকা নিয়ে বুয়েটের ৩১ জনসহ মোট ৩২ শিক্ষার্থী ঘুরতে যান টাঙ্গুয়ার হাওরে। বেড়ানোর একপর্যায়ে দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে নতুন বাজারের সামনে নৌকাটি আটক করে পুলিশের দুটি স্পিডবোট। এসব শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে সোমবার (৩১ জুলাই) তাহিরপুর থানার এসআই মোঃ রাশেদুল কবির বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর বিভিন্ন ধারায় মামলা করেন। তারা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং গোপনে মিটিং করতেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এসেছিলেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
পরে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে আদালতে তাদেরকে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে এবং দু’জন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন- বুয়েট শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার সাজানো নাটক, দাবি অভিভাবকদের
পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন্য বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন প্রথম বর্ষ, ছয়জন দ্বিতীয় বর্ষ, পাঁচজন তৃতীয় বর্ষ, পাঁচজন চতুর্থ বর্ষ এবং দুইজন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে সাতজন বুয়েটের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী। অন্য তিনজনের মধ্যে দুইজন এবার এসএসসি পাস করেছে, একজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাসায় কাজ করেন।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ এহসান শাহ্ জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে যেসব আলামত পাওয়া গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে শিবির বুয়েটে গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। মোবাইল ও ডিভাইস যাচাই করলে সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা বা নাশকতার বড় বিষয় বেরিয়ে আসতে পারে।
আরও পড়ুন- গ্রেপ্তার বুয়েটের ৩১ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনের রিমান্ড চাওয়া হবে: পুলিশ
স্থানীয় পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই অভিযান হয়েছে। এতে নেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কাগজপত্র, সংগঠনের তহবিল-সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সংগঠনের সাথি ও সদস্যদের পাঠযোগ্য সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়। পুলিশের দায়ের করা মামলার জব্দ তালিকায় তা উল্লেখ করা হয়েছে।