কোনো সরকারি কর্মচারীকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের ওপর রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে আজ বুধবার শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী সরোয়ার আহাদ চৌধুরী, একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও মাহবুবুল ইসলাম। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিধান রেখে তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া ‘সরকারি চাকরি আইন’ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত মনে করছে, এমন বিধানের মানে হচ্ছে, বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেওয়া। শুধু তাই নয়, এমন বিধান দুর্নীতিতে উৎসাহ জোগাবে।
সরকারি কর্মচারী আইনে থাকা ‘কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি’ নেওয়ার বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের উপর শুনানির সময় বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এমন মন্তব্য আসে।
২০১৯ সালের ২১ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬(১) (২),২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলে বৃহস্পতিবার রায় দেবেন হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয়-১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেফতার করতে হলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
তখন মনজিল মোরসেদ জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন ৪১(১) ধারায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় আপিল বিভাগের একটি রায় তুলে ধরে বলেন, আইনটি সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষার জন্য করা হয়েছে। আইনটিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেনি। সব সরকারি কর্মচারীর বেলায় এ বিধান প্রযোজ্য।
তখন এক বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আইন করার ক্ষেত্রে সরকার কীভাবে বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেয়! এতে তো দুর্নীতিতে আরও উৎসাহ জোগাবে।