কিছু দিন আগে খুব অল্প পরিচিত এক ছেলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। টিউশনি করে চলে। কেমন আছো, জিজ্ঞেস করতেই বলল, ভাইয়া আমাকে ১২০০ টাকা লোন দিবেন?
আগে যেহেতু তেমন একটা আলাপ ছিল না এবং হঠাৎ টাকা লোন চাইবার কারণে আমিও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। তাই প্রশ্ন করলাম, টাকা লোন লাগবে কেন?
ছেলেটি বলল, দুইটা চাকরির জন্য আবেদন করবে। আবেদন ফি ১২০০ টাকা। হাতে টাকা নেই। আবেদন করার সময়ও বেশি নেই। দুইটি পদের জন্য আবেদন করতে ১২০০ টাকা লাগবে শুনে আমি সত্যিই অবাক হয়ে বললাম, আবেদন করতে এত টাকা লাগে?
ছেলেটি অন্য একটি চাকরির আবেদনের কথা উল্লেখ করে বলল, সেখানে একটি পদে আবেদন করতে ১,০০০ টাকা লেগেছিল। সে আরো বলল, টিউশনি করে যে টাকা পাই, মোটামুটি চলে যায়। কিন্তু চাকরির আবেদন করতে যেয়ে, অনেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। তারপর ঢাকায় যাওয়া, থাকা-খাওয়া বিষয়গুলো তো রয়েছেই।
আমি ছেলেটিকে আর কোন প্রশ্ন করলাম না। তার হাতে ১,৫০০ টাকা দিয়ে আবেদন করার কথা বললাম। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর ভাবছিলাম, আবেদন করা মানেই তো চাকরি পাওয়া নয়। আর এভাবে আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে থেকে চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত সম্ভাব্য সকল চাকরির পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে তো?
সাধারণত আমাদের চাকরির পরীক্ষাগুলো তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এক. এমসিকিউ পরীক্ষা।
দুই. লিখিত পরীক্ষা।
তিন. ভাইভা।
ধরে নিচ্ছি, একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। ৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। আবেদন ফি ৫০০ টাকা। ১০,০০০ জন চাকরি প্রার্থী ৫০০ টাকা খরচ করে আবেদন করল। অর্থাৎ এই ১০,০০০ জন এমসিকিউ পরীক্ষা দিবেন। এমসিকিউ পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ৩০০ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হলো। এই ৩০০ জন থেকে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ৫০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচিত করা হলো এবং সেখান থেকে ৫ জন চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেল।
যেহেতু আমাদের আবেদন ফি নিয়ে একটা প্রশ্ন এসে যাচ্ছে। কারণ অনেক পরীক্ষার্থীর আর্থিক সংকট রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে প্রাথমিক আবেদন করার সময় আবেদন ফি কমানো যেতে পারে। সেটা ২০০ টাকাও হতে পারে। অর্থাৎ সবাই ২০০ টাকা দিয়ে আবেদন করবে।
যারা এমসিকিউ পরীক্ষায় টিকবে, শুধুমাত্র তারাই লিখিত পরীক্ষার জন্য বাড়তি ফি প্রদান করবে। সেটা ২০০/৩০০ টাকা যেটাই হোক। অর্থাৎ যারা এমসিকিউ পরীক্ষায় বাদ পড়বে তাদের পরবর্তী আবেদন ফি দেয়ার দরকার হবে না। এটা করলে হয়ত অনেক পরীক্ষার্থীর বেশ উপকার হবে।
–রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।