সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় চাহিদার চেয়ে ১ হাজার ৭ শ ১৫ মেট্রিক টন মাছ বেশী উৎপাদন হচ্ছে। এলাকার খাল বিল ও পুকুরে চাষ করা মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছের আড়তে কেনাবেচা হচ্ছে। গোটা উপজেলায় মোট ২ হাজার ৮ শ ৮৫ টি পুকুর আছে। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও বাঙ্গালা ইউনিয়নে ব্যক্তি মালিকানায় বহু সংখ্যক পুকুর খনন করা হয়েছে।
এদিকে মৎস্য বিভাগ থেকে গত দু’বছরে খনন করা পুকুর সংখ্যা জরিপ করা হয়নি।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে জানানো তথ্যে, উল্লাপাড়া উপজেলায় মাছের চাহিদা ১৩ হাজার ৭ শ ৫ মেট্রিক টন। সেখানে বিভিন্ন জাতের ১৫ হাজার ৪ শ ২০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে বেশী উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার ৭ শ ১৫ মেট্রিক টন। আর কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল) মাছ বেশী চাষ করা হচ্ছে। উপজেলায় সরকারী ও ব্যক্তিগত মিলে ২ হাজার ৮ শ ৮৫ টি পুকুর আছে। পুকুরের জলা ও পাড় মিলে জমির পরিমাণ ১ হাজার ২ শ ২৭ দশমিক ৩৯ হেক্টর। সরকারী পুকুর আছে মোট ২ শ ৩৫ টি। যার জমির পরিমাণ ১ শ ৪০ দশমিক ৬০ হেক্টর। আর ২ হাজার ৬ শ ৫০ টি ব্যক্তিগত পুকুরের জমির পরিমাণ ১ হাজার ৮৬ দশমিক ৭৯ হেক্টর।
এছাড়া ৯ টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। এগুলো হলো- করতোয়া নদীতে ঘাটিনা, পালপাড়া, সোনতলা, বড়হর, দমদমা, কালিগঞ্জ, দহকুলা, সিমলা মোড়দহ। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের পাথার প্রান্তরের তিনটিসহ মোট পাঁচটি ইউনিয়ন এলাকায় বর্ষা কালে আবাদী মাঠ প্রান্তর এবং খাল বিল জলা পানিতে তলিয়ে যায়। ইউনিয়নগুলো হলো- উধুনিয়া, মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী, দুর্গানগর, কয়ড়া ও বাঙ্গালা। বর্ষার পানিতে বিপুল পরিমাণ নানা জাতের মাছে ভরপুর হয়ে থাকে। বর্ষার পানি নেমে যেতেই ইউনিয়নগুলোর খাল বিল জলাভূমি থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ দেশীয় নানা মাছ বিভিন্ন এলাকার মাছের আড়তে বিক্রি হয়।
এদিকে সারা বছরই পুকুরগুলোয় চাষ করা মাছ বিভিন্ন এলাকার আড়তে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক যুগ সময়ে উল্লাপাড়া উপজেলায় ব্যাক্তিগত পুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। এলাকায় মাছ চাষ ও মাছ চাষী বেড়েছে। গত দেড় বছর সময়কালে রামকৃষ্ণপুর ও বাঙ্গালা ইউনিয়ন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় বহু সংখ্যক বড় ছোটো নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। সরকারী অনুমতি না নিয়ে পুকুরগুলোর প্রায় সবগুলোই কৃষি জমিতে খনন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন ভাবে জানা গেছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দবিরগঞ্জের কাছাকাছি বনপাড়া মহাসড়কের দুধারে বহু সংখ্যক নতুন পুকুর খনন ও মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। বাঙ্গালা ইউনিয়নের চেংটিয়া ব্রীজের কাছাকাছি, বিনায়েকপুর এলাকায় বড় ধরণের নতুন পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- উল্লাপাড়ায় গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আতাউর রহমান জানান, উল্লাপাড়ায় পুকুর ও খাল বিলে চাষ করা মাছ বিভিন্ন এলাকার আড়তে কেনাবেচা হয়। এছাড়া এলাকার হাট বাজারগুলোয় কেনাবেচা হয়। এলাকার আড়তগুলো থেকে নানা ধরনের মাছ বিভিন্ন এলাকার মোকাম বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। উল্লাপাড়া উপজেলায় গত দুবছরে খনন করা নতুন পুকুরের সংখ্যা বিষয়ে জরিপ করা হয়নি। কম সময়ে নতুন পুকুর সংখ্যা জরিপ করা হবে বলে জানান। কৃষি জমিতে পুকুর খনন না করতে কৃষকদের তার বিভাগ থেকে মানা করা হয়ে থাকে। আর সরকারী নিয়ম নীতি মেনে পুকুর খনন এবং পুকুর খননে এলাকায় জলাবদ্ধতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ উজ্জল হোসেন বলেন উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বাঙ্গালা ইউনিয়নসহ আরো দু-এক এলাকায় কৃষি জমিতে সরকারী অনুমতি না নিয়ে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে অভিযান চালানো হয়েছে। এসকেভেটর মেশিনের ব্যাটারী ধংস ও অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সাতটি নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে।