পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া দুর্বল মুনাফার কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন শেয়ার প্রতি মাত্র ২০ পয়সা মুনাফা অর্জনকারী কোম্পানিটিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কিভাবে আইপিওতে আসার অনুমোদন দিলো?
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ অর্থ সম্পাদক মোঃ সাজ্জাদুর রহমান প্রশ্ন তুলে বলেন- এতো দুর্বল কোম্পানিকে কিভাবে কমিশন আইপিওতে আসার অনুমোদন দিলো? কোম্পানিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগ উঠে নাও আসতে পারে বলে মনে করি আমরা। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের আকাঙ্খিত ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। পাশাপাশি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স এতো দুর্বল মুনাফা থেকে আদৌ সবল মুনাফার কোম্পানিতে রূপান্তরিত হতে পারবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
তিনি কমিশনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, আর কি কোনো ভালো মানের কোম্পানি নেই। এমন দুর্বল মুনাফার কোম্পানিকে আইপিওতে আসার অনুমোদন দিতে হলো। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অতালিকাভুক্ত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে বলেই কি এই ধরনের কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিতে হবে বিএসইসিকে?
কোম্পানি সচিব মোঃ মিজানুর রহমান জানান, আমাদের কোম্পানিটি দুর্বল মুনাফার। এই দুর্বল মুনাফার কোম্পানিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের ইচ্ছা হলে বিনিয়োগ করবে ইচ্ছা না হলে করবে না। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই। তাছাড়া, পুঁজিবাজারে তালিকা হয়ে চার্টার্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোন লাভ হবে না। আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইনি।
আরও পড়ুন- ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা মামলার আসামীর মৃত্যুদণ্ড
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, কোম্পানিটির মুনাফা খুবই কম। এর আগে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হতে কমিশনে আবেদন করেছিল। কিন্তু তাদের আর্থিক পারফর্মেন্স মন্দ থাকায় আবেদন খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু এবার কোম্পানিটি বিএসইসির নিয়ম-কানুন মেনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। কমিশনও তাদের আবেদন গ্রহণ করেছে। তবে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে শেষ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হতে পারবে কি-না তা নির্ভর করছে বিনিয়োগকারীদের উপর। কোম্পানিটির আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের কাঙ্খিত আবেদন জমা না পড়লে নিয়ম অনুযায়ী আইপিও বাতিল হয়ে যাবে। আর আইপিও বাতিল হলে এবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না কোম্পানিটি। এখন দেখা যাক কোম্পানির আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে কি ঘটে।
জানাগেছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ছিল মাত্র ০.২০ টাকা। এই দুর্বল মুনাফা নিয়ে কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিওতে) আবেদন শুরু ২৫ সেপ্টেম্বর এবং শেষ হবে ২৯ সেপ্টেম্বর। কোম্পানিটি এর আগের বছর ২০২০ সালে ১ পয়সাও ইপিএস অর্জন করতে পারেনি। দুর্বল মুনাফার কারনে কোম্পানিটির ২.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন হয়নি। কিন্তু কমিশন বিগত আইপিও দেওয়া কোম্পানিগুলোকে ৩ বছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার শর্তে আইপিও দিয়েছে। এমনকি এসএমইতে আসা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও একিই শর্ত প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে অবশ্য চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কমিশনকে জানিয়েছে, তালিকাভুক্তির পরে তারা ভালো করার চেষ্টা করবে।
২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের চার্টার্ড লাইফের সর্বশেষ ২০২১ সালে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরনযোগ্য নিট মুনাফা করেছে ৪৫ লাখ টাকা; যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে ২০ পয়সা। কোম্পানিটির ওই বছরে শেয়ারবাজার থেকে ক্যাপিটাল গেইন হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই ক্যাপিটাল গেইন না হলে কোম্পানিটিকে ২০২০ সালের আগের তিন বছরের মতো লোকসান গুণতে হতো। এর আগে গত বছর লোকসানের কারনে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন বাতিল করে দেয় কমিশন। কারন কোম্পানিটি ১৯ সাল থেকে আগের বছরগুলোতে লোকসানে ছিল। কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করবে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর ৬ কোটি টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে। বাকি ১ কোটি ১০ লাখ টাকা আইপিওতে ব্যয় হবে।
উল্লেখ্য, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে এবং বাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।