ব্যাটারি চালিত ভ্যান নিয়ে ছুটে বেড়ান ভাঙ্গন কবলিত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার আনাচে-কানাচে। বাড়ি প্বার্শবর্তী নাগরপুর উপজেলার ভাড়রা ইউনিয়নের শাহজানী গ্রামে। নিজের উপজেলা থেকে নাগরপুর উপজেলায় বেশি ছুটে । তবে তিনি এমনি এমনি ছুটে বেড়ান না। তার ভ্যানের এক পাশে আখ আর অন্যপাশে আখ মাড়াই করা মেশিন। এই গরমে সবাই চলে আসেন ছানোয়ার খাঁ ভ্যানের কাছে। এক গ্লাস আখের রস খেয়ে তৃষ্ণা মেটান।
গত চার বছর ধরে চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে ঘুরে ছানোয়ার খাঁ ও তার পঞ্চমশ্রেণির ছাত্র হাবিব । দুই সন্তানের জনক এই ব্যক্তি এই কর্ম করেই স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন টিকে আছেন। তার প্রতিদিন বেচা-বিক্রি প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন জাহার টাকা। এতে তার আয় হয় হাজার টাকার মতো। আর এদিয়ে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচসহ পরিবারের যাবতীয় খরচ মেটান তিনি।
চৌহালী সরকারি কলেজ মোড়ে দেখা হয় ছানোয়ার খাঁর সঙ্গে। স্থানীয় কিছু মানুষ তার ভ্যানের কাছে ভিড় করেছেন। উদ্দেশ্য এক গ্লাস আখের রসে জুড়াবে প্রাণ। একে একে বেশ কয়েকজন ছানোয়ার খাঁর আখের রস খেয়ে তৃপ্তি নিয়ে জায়গা ত্যাগ করছেন। কেউ কেউ আবার একের অধিকও খাচ্ছেন। শুধু বড়রা নয়, ছোটরাও ছানোয়ার খাঁর আখের রস পান করতে ছুটে আসছেন।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি এমদাদুল হক
ছানোয়ার খাঁ বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় আমি চৌহালী উপজেলায় থাকি। সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরি রাত ৮টায়। এর মধ্যে যা আয় হয়, তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চালাই। এখানে শুধু ব্যবসার জন্যই আসি না, এখানকার সবার সঙ্গে আমার একটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। তাই একদিন বাড়িতে থাকলে মনে হয় কী যেন মিস করছি। আয় অনেক দিন হাজারের কমও হয়। তবে, ভালো আছি।’
কথা হয় আখের রস নিতে আসা স্থানীয় আরিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছানোয়ারের আখের রসের ভ্যান দেখলেই আমি এক-দুই গ্লাস পান করি। আজকে যেহেতু আমার বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন, তাই এক লিটারের দুই বোতল ভরে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’ তবে ছানোয়ারের আখের রসের গুণগত মান অন্যদের তুলনায় ভালো বলেও জানান তিনি।
আখের রস পান করতে আসা কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তার বাড়িও একই এলাকায়। তিনি বলেন, ‘ছানোয়ার খাঁ প্রায়ই চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি এ উপজেলায় ভ্যানে করে আখের রসের ব্যবসা করছেন। সবাই ভালো বলেন। তাছাড়া তিনি মানুষও খুব ভালো। এত দিন ধরে এ এলাকায় ব্যবসা করলেও কোনো দিন কারো সঙ্গে মুখ কালো করেননি।’ যখনই তার সঙ্গে দেখা হয়, তখনই এক গ্লাস আখের রস খেয়ে তৃষ্ণা মেটান বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে আর্জেন্টিনা পতাকা টাঙাতে গিয়ে স্কুল ছাত্র নিহত!
সাবেক চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য সম্মতভাবে আখের জুস পান করতে পারলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আখ দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খেলে দাঁতের জন্যও উপকারী। এতে খনিজ উপাদান ছাড়াও ভিটামিন রয়েছে। তবে অনেক সময় রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকরভাবে তা বিক্রি করা হয়। সেটা আমাদের শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেখা যায় আখের রস বিক্রেতারা অনেক সময় বেশি লাভের আশায় আখের জুসের সঙ্গে বরফ ব্যবহার করেন। তারা যে বরফ ব্যবহার করেন, সেটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা কিন্তু আমাদের জানা নেই। কাজেই আখের রস বিক্রেতাদের উপর নির্ভর করে কার্যকরী এই আখের জুসের গুনাগুন। তবে আখ অনেকেই অনেকভাবে বিক্রি করে নিজের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করছেন।’ এদিকে চৌহালী উপজেলার নর্ব যোগদানকারী ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সমাজে ছানোয়ার খাঁর মতো অনেক দিনমজুর রয়েছে যারা সৎ ভাবে আখের রস বিক্রি করে ছেলে -মেয়ের লেখাপড়া সহ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে৷ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ যেকোন ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা৷