নদী দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। নদী দখল এবং দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পের জমি উদ্ধারের পর কার্যত এ অভিযান বন্ধ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দু-চারটি বিচ্ছিন্ন উচ্ছেদ ছাড়া নদীতে চলতি বছর দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়নি।
ফলে অনেক স্থানে দখল ও দূষণকারীরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। এছাড়া ইজারার নামে নদী দখলের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ উদ্যাপন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব নদী দিবস’। দিবসটি উপলক্ষ্যে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
লক্ষ্মীপুরের ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীর তীরে নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। এসব বর্জ্য গড়িয়ে নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও নদীর পানি। অন্যদিকে নদী দখল করে বড় বড় ইমারত নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থাপনা নির্মানের অভিযোগে রায়পুরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ খালে কেরোয়া ইউপির জোড়পুল এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন। এসময় রুহুল আমিন পাঠান নামের একজন আটক করেন।
স্থানীয়রা জানান, রায়পুর-খাসেরহাট সড়কের বংশী স্টিল ব্রিজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর তীরে ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদারের মাছ ঘাট মেঘনা নদীর তীরে বেশকিছু হোটেল ও বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে। সাজু মোল্লার মাছ ঘাটে নদীর পাড়ে ফুডক্লাবের ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিন হায়দরগঞ্জ বাজারের টনেটনে বর্জ ও পাশের প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেলের এবং চরবংশি ইউপির মোল্লারহাট বাজারের ও হাজিমারা সুইজগেইট সংলগ্ন বাজারের ময়লা আবর্জনা মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে।
এ কারণে নদী ও পরিবেশও দূষিত হয়ে পড়ছে। এক সময় ঢাকা থেকে মেঘনা নদী হয়ে ডাকাতিয়া নদী দিয়ে রায়পুর হয়ে নৌপথে যাতায়াত করত মানুষ। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। নদীতে বর্জ্য ও ময়লার স্তূপ থাকায় দুর্গন্ধে পানির কাছে যাওয়া যায় না।
জানা যায়, আশির দশকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ডাকাতিয়া নদীপথে লঞ্চ ও বড় ট্রলার ছিল এলাকাবাসীর একমাত্র বাহন। আর ব্যবসায়ীরা যাবতীয় মালামাল আনা-নেওয়া করতেন নৌকায়।
উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয় (ধান হাটা) টার্মিনাল থেকে সদরঘাট পৌঁছাতে সময় লাগত প্রায় ছয় ঘণ্টা। এরপর স্থলপথের উন্নয়নে কিছু পরিবর্তন আসে। স্থলপথে এখন তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাতে পারলেও নদীপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। নদীভাঙন ও বন্যার কবল থেকে রায়পুরের চার ইউনিয়নবাসীকে রক্ষা করতে সরকার মেঘনার মুখে বেড়িবাঁধ এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে। ফলে নদীপথ বন্ধ হয়ে যায়। নদীপথ বন্ধ হওয়ায় অবহেলিত ডাকাতিয়া এখন ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। হোটেলসহ অসচেতন ব্যবসায়ী কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলে দেন।
এ ছাড়া শহরের ধানহাটা এলাকায় নদীর অংশে বাজারের হোটেলসহ বাসাবাড়ির সব বর্জ্যও নদীতে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, নদীতে বর্জ্য ফেলায় তাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তাদের দাবি, ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকার রায়পুর-হায়দরগঞ্জ সড়কের বাঁধের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করে দিলে এলাকাবাসীর সুবিধা হবে। সেইসঙ্গে বর্ষা মৌসুমে পানি ছাড়লে কৃষি জমিতে পলি জমবে।
রায়পুরের সমাজকর্মী লেখক আবদুর রব ও ভিপি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এ উপজেলায় কিছু লোক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য হোটেলসহ বাসাবাড়ি নির্মাণ করে আমাদের প্রাণের ডাকাতিয়া নদী দূষণ করছেন। এটা জনগণ মেনে নেবে না।
প্রশাসনকে বিষয়টি আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাকাতিয়া নদী বাঁচাতে ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে ‘ডাকাতিয়াকে বাঁচাও’ নামে একটি সংগঠন আন্দোলন-সংগ্রাম ও মানববন্ধন করছে।
এবিষয়ে ইউএনও অনজন দাশ বলেন, বর্জ্য নদীতে না ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলা হয়েছে। তারপরও কেউ ফেললে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।