লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হাট-বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। হাটের রাস্তায় দোকান বসানো এবং বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাধারণ পথচারী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছাচ্ছে।
উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট হায়দরগঞ্জ। দেশ স্বাধীনের পর ব্যক্তি মালিকানায় প্রথমে হাটটি গড়ে ওঠে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অল্প দিনেই এটি জমজমাট হয়ে ওঠে। বর্তমান এটি মেঘনা উপকূলীয় পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গরু, ছাগল ও কাঁচামাল বেচাকেনার হাট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি। এ বছরে হাটটি ইজারা না হওয়ায় সরকারিভাবেই ইজারা তোলা হয় । সপ্তাহের রোববার ও বুধবার বসে এ হাট। বাকি ৫ দিন বসে বাজার। হাটের দিন রায়পুরের পাঁচ ইউপি ও চাঁদপুরের চরভৈরবি ও হাইমচর ইউপির বাসিন্দাদের ব্যাপক লোক সমাগম হয় হাটটিতে।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটের পচা-গলা ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় আস্তাকুঁড় (ডাস্টবিন) উপচে পড়েছে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ক্রেতা সাধারণের প্রাণ।
হায়দরগঞ্জের সমাজ সেবক তাহশীন হাওলাদার ও ব্যবসায়ী ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘গোটা বাজার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত হাটের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইজারাদার না থাকায় ময়লা পরিষ্কার করা হয়না। ময়লা-আবর্জনায় পুরোনো নালাটি ভরে গেছে। ওই নালা দিয়ে এখন আর পানি নিষ্কাশন হয় না।
সরকারি হিসেবে বাজারের আয়তন ১৬ একর। বর্তমানে বাজার বর্ধিত হয়ে ৩০/৪০ একর হয়েছে । বাজারে প্রায় তিন হাজার ৫’শ জন ব্যবসায়ী আর দোকান সংখ্যাও প্রায় এক সমান । প্রতিদিন বাজারের রাস্তা দিয়ে চলাচল করে ৬টি মাধ্যমিক স্কুল ও ১মাদ্রাসার ও ১টি কলেজের ৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রী । বাজারের করুন অবস্থা দেখে সম্প্রতি স্থানীয় শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী খোকনের দানে ১০০টি ওয়েষ্টবিন বাজারে স্হাপন করা হলেও ৩/ ৪ দিনেই পরিস্কার করা হয়নি । বিশেষ করে মাছ ও তরকারি বাজারের ডাষ্টবিন উপচে পড়ে সবসময়। হায়দারগন্জ বাজারে প্রতিদিন ব্যাবসায়ী ক্রেতা বিক্রেতা ও ৭টি সরকারি/বেসরকারি ব্যাংকের গ্ৰাহক মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। যাদের ভাঙ্গা রাস্তা ও পয়ঃ বর্জ্যের দুর্গন্ধ সহ্য করে তাদের কাজ করতে হয় । বাজারের পরিচ্ছন্ন কর্মী দের মাসিক টাকা না দেয়ায় তারাপরিস্কার করেনা।
হায়দরগঞ্জ বাজারে কথা হয় ঝাউডুগি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাইজান, সরকার খালি আঙ্গো কাছের তোন টেয়া নেয়। কিন্তু আঙ্গো দুঃখকষ্ট দেখে না। হায়দরগঞ্জ বাজারে জায়গা না থাকায় আঙ্গো কষ্টের ফসল বসি বেচতাম হারি না। আস্তাত (রাস্তা) দারে কম দরে বেচতাম লাগে।’
খাজনা তোলার দায়িত্বে-থাকা দক্ষিন চরআবাবিল ইউপি তহসিলদার আলি আহাম্মদ মুঠোফোনে বলেন, এ বছর বাজারের ডাক হয়নি। তাই ইউএনওর নির্দেশে আমরাই খাজনা তুলি। হাটের জায়গার সংকট। নগদ টাকা দিলেও সুইপাররা কাজ করেন না। হাট নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
রায়পুর বাজারের হাটের পরই সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে হায়দরগঞ্জ বাজার। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটটি ঘিরে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধে একাকার। নোংরা পরিবেশ অনেককেই হাটবিমুখ করে তুলেছে। কাঁচামালপট্টি ও মাছপট্টিজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হাটে যেখানে–সেখানে গরু–ছাগল জবাই করা হয়। জবাই করা পশুর রক্ত-বর্জ্য ফেলা হয় যেখানে–সেখানে। ফলে রক্ত-নোংরা পানির দুর্গন্ধে ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। মাছের বাজার বসেছে খোলা জায়গায় নোংরা পরিবেশে।
হাটের মুদি দোকানি আশ্রাফ হোসেন বলেন, গত দশ বছর ধরে এ বাজারে কোনো উন্নয়ন নেই। বাজারের পানিনিষ্কাশনের নালাটি ময়লা–আবর্জনায় ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে হাটের ভেতর হাঁটুসমান কাদা-পানি জমে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। কাদার কারণে ব্যবসায়ীরা হাটের নির্ধারিত স্থানে বসতে না পেরে হাটের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া বেরিবাঁধ ও রায়পুরে যাওয়ার সড়কের ওপর মালামাল নিয়ে বিক্রির জন্য বসতে হয়। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
উদমারা গ্রামের শিক্ষিত যুবক মাকসুদ আলম ও মোঃ রুবেল বলেন, এ হাটের ভেতরেই গরু, ছাগল জবাই করা হয়। পচা রক্ত, নোংরা পানি ও মাটির দুর্গন্ধে মাংসের বাজারে যাওয়া যায় না। নাক-মুখ চেপে ধরে মাংস কিনতে গেলেও বমি বের হয়।
বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, এ বাজারের বটতলায় নির্মিত গণশৌচাগারটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় খোলা আকাশের নিচে।এতে হাটের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
এ হাটের মাংস বিক্রেতা হারুন মিয়া বলেন, ‘জায়গার অভাবে হাটে পশু জবাই করা হয়। জায়গা পেলে আমরা হাটের ভেতর পশু জবাই করব না। আর ময়লা-আবর্জনা তো যেখানে–সেখানে ফেলার অভিযোগ ঠিক না।’
এ ব্যাপারে ইউএনও অনজন দাশ বলেন, ‘বাজারটি নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই হাটের ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’