দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের সামনের রাস্তাটুকু খানা-খন্দভরা। ফলে প্রতিদিন লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের মনা মাষ্টার গো-বাড়ির সামনে থেকে ঝুমুর সিনেমা হল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা একেবারে জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টি আসলে এ দুই কিলোমিটার রাস্তায় জুড়ে সৃষ্টি হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় সামনে সড়কের এমন চিত্র। তবুও তারা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। এতে করে সাধারণ মানুষের ভেতরে একধরণের চাপাকষ্ট বিরাজ করছে। এছাড়াও সড়ক বিভাগ অফিসের সামনে বাস-ট্রাক পার্কিং করা হয়। যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কটি সংস্করণ করা হয়েছে। এতে করে দক্ষিণ অঞ্চলের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সড়কে। মাত্র জেলা শহরের দুই কিলোমিটার রাস্তার কারণে রোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। প্রায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের সামনে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। চলতি বছরে জনপদ বিভাগের সামনে একটি অটোরিকশা উল্টে এক চালক মৃত্যুবরণ করে। এছাড়াও দুই বছর পূর্বে মিজানুর রহমান রুবেল নামে এক শিক্ষক এ সড়ক বিভাগের সামনে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ঘটনাস্থলে। তখনকার সময় রাস্তা সংস্করণ ও নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিং করার দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
একটি বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক মো. আবু ছিদ্দিক বলেন, পাঁচ দিন পূর্বে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিবি নাসরিন আক্তারকে সিএনজি অটোরিকশায় করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে আনা হয়। এতে করে দক্ষিণ তেহমুণী বাসস্ট্যান্ডে রাস্তায় ছোট-বড় গর্তের কারণে ২ মিনিটের পথ তাদের প্রায় হাসপাতাল পৌঁছতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, দক্ষিণ তেহমুণী এলাকার পাশে ডিসি, এসপি, জজ ও সিভিল সার্জনের বাসভবন। তাঁরা প্রতিদিন এ ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করে অফিসে। তারা চুপচাপ থাকার কারণে আজ সড়কের এমন করুণ চিত্র।
লক্ষ্মীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন বলেন, চতুর্দিকে সরকারের উন্নয়ন হলেও এ রাস্তাটা কি কারণে ঠিকঠাক করা হয় না? তাই সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবি থাকবে তারাতাড়ি এ ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক মেরামত করার।
উম্মে আয়মান রুমা নামে এক নারী বলেন, ছোট বোনের এসএসসি পরীক্ষা চলে। তাই তাকে নিয়ে রিকশা করে পরীক্ষা কেন্দ্র আনা-নেওয়া করি। সড়কে ছোট-বড় গর্তে চাকা পড়লে শরীরে অবস্থা ১২ টা বাজে। একটুখানি সড়ক যেনো মৃত্যুর কুপ। আমার দাবি থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সড়ক মেরামত করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
আবিরনগর গ্রামের অটোরিকশা চালক মো. আবুল কালাম বলেন, মনা মাষ্টার বাড়ি সামনে, সড়ক বিভাগ, দক্ষিণ তেহমুণী বাসস্ট্যান্ড, ট্রাফিক চত্বর, মডেল হাসাপাতাল ও সিটি হাসপাতালের সামনে রাস্তায় ছোট-বড় শতশত গর্ত রয়েছে। এ দুই কিলোমিটার রাস্তা গাড়ি চালাতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। গর্তে চাকা পড়লে হঠাৎ মানুষ রেগে গিয়ে আমাদের গালমন্দ করে। আমাদের তখন কিছুই করার থাকে না। অনেক-সময় আবার গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দাবি দ্রুত এ কতোটুকু রাস্তা মেরামত করার।
চা-দোকানি মো: বেলাল হোসেন বলেন, বক্তব্য দিয়ে কি আর হবে? সড়ক বিভাগের সামনে রাস্তার এমন অবস্থা আমি এ-র আগে কখনো দেখিনি। আমার দোকান থেকে একটু অদূরে প্রায় অটোরিকশা, সিএনজি ও মালবাহী পিকআপভ্যান উল্টে পড়ে যায়।
সৌদিআরব প্রবাসী দক্ষিণ টুমচর গ্রামের বাসিন্দা মো: আব্দুর সত্তার বলেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম এমন সড়ক আমার চোখে পড়েনি। ইতিপূর্বে দেশে এসে দেখলাম। আমাদের এলাকার রাস্তাগুলো খুব খারাপ অবস্থা। তবে ঢাকা লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারি। এসামান্য টুকু রাস্তা সংস্করণ করা হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
সিটি হাসপাতাল সংলগ্ন ব্যবসায়ী মো. জাফর আলম ও ঔষধ ফার্মেসি দোকানদার মো: নাহিদ শীর্ষ সংবাদকে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এখান দিয়ে চলাফেরা করেন। তারা কি চোখে দেখে না সড়কের এমন দুরবস্থা। কয়েক মাস থেকে সড়কের এমন চিত্র প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে সিটি হাসপাতালের সামনে। দ্রুত গতিতে মাঝেমধ্যে গাড়ি চলাচল করলে সড়কের নোংরা পানি দোকানপাটে প্রবেশ করে।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) জহিরুল ইসলাম শীর্ষ সংবাদকে বলেন, সড়কে ছোট-বড় গর্ত তাঁর জানা নেই। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখালে নড়েচড়ে বসে জহিরুল আলম।
তবে তিনি বলেন, রাস্তার অধিকরণ বিষয় নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসক ও ঠিকাদারের সঙ্গে বসে রাস্তা যথারীতি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক বিভাগের সামনে জোরপূর্বক বাস-ট্রাক চালকরা গাড়ি পার্কিং করে। এখানে আমার কিছু করার নেই।