বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গন ঢালিউডের ক্ষণজন্মা অমর চিত্রনায়ক সালমান শাহর ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৬ সালের এই দিনে সমকালীন ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনে বড় শূন্যতা তৈরি করে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বাংলা সিনেমার ফ্যাশন আইকন খ্যাত কালজয়ী এই নায়ক।
সিনেমা জগতে মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন তিনি।এই অল্প সময়েই তিনি দর্শকদের হৃদয় জয় করে একের পর এক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। রহস্যজনক মৃত্যুর ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও জানা সম্ভব হয়নি এর আসল কারণ। অপমৃত্যু নাকি হত্যাকাণ্ড এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।
তবে সালমান শাহ হত্যা মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে করা রিভিশন মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। গত ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২৬ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন।
দেশীয় সিনেমায় ধূমকেতু হয়েই যেন ধরা দিয়েছিলেন সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে পা রাখেন তিনি। একই সিনেমায় অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা মৌসুমীরও।
প্রথম সিনেমাতেই সাফল্যের দেখা পান তিনি। তার চলন-বলন ও পোশাক-পরিচ্ছদ তরুণদের মন জয় করে নেয়। নায়ক সালমান ও ব্যক্তি সালমান দুইটিই জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্পর্শ করে।
সালমান শাহর প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী।
সালমান শাহ ক্যারিয়ারের শুরুতে কাজ করেছেন ছোট পর্দায়। ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’তে নাটকে তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রচুর বিজ্ঞাপনও করেছেন তিনি।
সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো- ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (বিপরীতে মৌসুমী), ‘তুমি আমার’ (শাবনূর), ‘অন্তরে অন্তরে’ (মৌসুমী), ‘কন্যাদান’ (লিমা), ‘জীবন সংসার’ (শাবনূর), ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (শাবনূর), ‘সুজন সখী’ (শাবনূর), ‘বুকের ভেতর আগুন’ (শাবনূর), ‘এই ঘর এই সংসার’ (বৃষ্টি), ‘স্নেহ’ (মৌসুমী), ‘বিচার হবে’ (শাবনূর), ‘প্রেমযুদ্ধ’ (লিমা), ‘মহা মিলন’ (শাবনূর), ‘তোমাকে চাই’ (শাবনূর), ‘বিক্ষোভ’ (শাবনূর), ‘আশা ভালোবাসা’ (শাবনাজ), ‘মায়ের অধিকার’ (শাবনাজ), ‘আঞ্জুমান’ (শাবনাজ), ‘আনন্দ অশ্রু’ (শাবনূর), ‘প্রেম পিয়াসী’ (শাবনূর), ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ (শাহনাজ), ‘প্রিয়জন’ (শিল্পী), ‘শুধু তুমি’ (শ্যামা), ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ (শাবনূর), ‘স্বপ্নের নায়ক’ (শাবনূর), ‘দেন মোহর’ (শাবনূর) ও ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ (শাবনূর)।
‘বুকের ভেতর আগুন’ ছিল সালমান অভিনীত শেষ সিনেমা। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে সবচেয়ে বেশি ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন শাবনূর।
১৯৯৬ সালে নিজ ঘরে সালমান শাহ’কে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য থেকে যায়। অনেকেই সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য স্ত্রী সামিরার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। এমনকি সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু পরে এই মামলার তেমন অগ্রগতি হয়নি। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের তদন্ত বিভাগ জানায় যে সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন।