লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নতুন পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত ডাক্তার আবদুল হক মেমোরিয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইন আবেদন করার অভিযোগ উঠেছে। এসএসসি ও সমমানের পাস করা প্রায় ২০ শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির কোনও আবেদন না করলেও ওয়েবসাইটে ‘আবেদন সম্পন্ন হয়েছে’ লেখা দেখতে পায়। এই আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইন হওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তা বাতিল বা নতুন করে আর কোনও কলেজে ভর্তির আবেদন করতে পারছে না। উল্লেখ্য-আগামি ১১ জুন কলেজে ভর্তির শেষ আবেদন তারিখ।
এবিষয়টি নিয়ে গত তিনদিন আগে উত্তর চরবংশী ইউপির জয়নালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিমুল হোসাইন তার আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেইসবুক) প্রকাশিত হলে চরম নিন্দা ও ক্ষোভ সৃস্টি হয়।
প্রতিটি আবেদনে ডাক্তার আবদুল হক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম প্রথম পছন্দে রাখা হয়েছে। তাই এই প্রতিষ্ঠানের কেউ একাজ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ধারণা।
স্থানীয় পাঁচটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ভোগান্তিতে পড়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- উত্তর চরবংশী জয়নালিয়া, চরআবাবিল ইউপির হায়দরগন্জ বেগম রোকেয়া বালিকা বিদ্যালয়, মডেল স্কুল, বন্ধন একাডেমি ও চরবংশী মোবারকিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা।
চরবংশী জয়নালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে ব্যাবসায় শিক্ষা শাখা বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ইয়াসিন আরাফাত ও সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা এসএসসি পরীক্ষায় ৪.২০ সিজিপিএ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। ইচ্ছে ছিল ভালো কোনও কলেজে ভর্তির আবেদন করবো। আবেদন করতে গিয়ে দেখি সার্ভারে আমার অনলাইন আবেদন নিচ্ছে না। পরে জানতে পারি, ডাক্তার আবদুল হক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের লোকজন আমরাসহ ১০ জনকে না জানিয়ে তাদের কলেজকে প্রথম চয়েস দিয়ে আমার আবেদন করেছেন। অথচ সেখানে ভর্তির কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা এখন অন্য কোথাও আবেদন করার সুযোগও পাচ্ছি না। এখন আমরা কলেজে ভর্তি নিয়েই শঙ্কিত।’
হায়দরগন্জ বেগম রোকেয়া স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী লিমা ও মোহনা আক্তারের অভিভাবকরা বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের না জানিয়ে এ ধরনের কাজ ঠিক করেননি। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের মেয়েদের অন্যত্র আবেদন করার জন্য যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
একই অভিযোগ মডেল স্কুল থেকে এ বছর এসএসসি পাস করা তামিম ইকবালের। তামিম বলেন, ‘আমরা নিজ পছন্দের কলেজে অনলাইন ভর্তির কার্যক্রম করতে গিয়ে দেখি, আমাদের ফরম পূরণ আগেই সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, আমাদের না জানিয়ে ডাক্তার আবদুল হক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকেই এসএমএস করা হয়েছে। এখন আমরা নিজেদের পছন্দের কলেজে ভর্তির আবেদন করতে পারছি না।’
আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের মতামত না নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই আমাদের এসএমএসে তাদের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করেছে। তাই আমরা সবাই চাই, ডিজিটাল ভর্তির স্বচ্ছতা ও অনুমতি না নিয়েই কলেজ পছন্দের ভর্তির ফরম পূরণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
ডাক্তার আবদুল হক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ খান আল মামুন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নতুন। এটির স্বীকৃতির (এমপিওভুক্তি) একটি বিষয় আছে। যত বেশি ছাত্রছাত্রী থাকবে তত দ্রুত স্বীকৃতি পাবো। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলে সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। তা ছাড়া এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন না করলে আমরা শিক্ষার্থী পাবো কোথায়? আর অনেকের সঙ্গে কথা বলে আবেদন করেছি। কারও সঙ্গে যে যোগাযোগ করিনি তা ঠিক না। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমরাও হতবাক কে বা কারা আমাদের না জানিয়ে কলেজের নামে আবেদন করেছে। আমরা কুমিল্লা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। প্রতারকের নাম ঠিকানা সংগ্রহে কাজ করছি। কেউ যদি ভর্তি না হতে চায়, আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’ তছাড়া গত ২১ মে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানের মালিক শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের আলতাফ হোসেন হাওলাদারের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর বাড়াতে তৃতীয় কোন পক্ষ এসুযোগটি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান খান বলেন, ‘বিষয়টি আমি স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শুনেই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে অভিযোগের বিষয়টি বলেছি। শিক্ষার্থীরা কোথায় ভর্তি হবে তা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। যদি কোনও শিক্ষার্থী না আসে তাদের আবেদন কেউ জোর করে করতে পারবেন না। ওই কলেজের যদি কেউ আবেদন করে থাকে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবো।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম সাইফুল হক বলেন, ‘কোনও কলেজের কেউ এ ধরনের অনৈতিক কাজ করতে পারে না। যদি তারা শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের ভর্তির আবেদন করে, সেটি অপরাধ করেছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।