লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এম. সজীবের নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম জানাজা চন্দ্রগঞ্জস্থ প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা সোয়া ১১টায় পাঁচপাড়া গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সজীবের মরদেহ। এসময়, জানাজার নামাজে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানাজার নামাজের আগে লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু বক্তব্য প্রদানকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সজীবের স্মৃতিচারণ করে এমপি পিঙ্কু বলেন, আমি সজীবের মা ও স্ত্রীকে বোঝানোর কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি। তারা আমার কাছে সজীব হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সজীব হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রশাসনের কাছে জোর দাবী থাকবে, হত্যাকারীরা যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশীলই হোক, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ হত্যার বিচার না হলে, ভবিষ্যতে অনেক সজীবকে আমাদের এভাবে হারাতে হবে। আমি সজীবের মায়ের কান্না, শ্বশুরের কান্না ও স্ত্রীর কান্না দেখেছি। তার একটি পুত্রশিশু সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী অঝোরধারায় কাঁদছে আর আকুতি জানিয়ে বলেছে, ‘সে কার কাছে যাবে, তার বাচ্চার কি হবে’। তাদের কান্না দেখে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাইনি। তাদের কান্নায় যেন সবকিছু থমকে গিয়েছিল’।
জানাজার নামাজে আরো উপস্থিত ছিলেন- লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশক বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ মান্না, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, সহ-সভাপতি ছাবির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল মাহমুদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, চন্দ্রগঞ্জ থানা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. সাহাব উদ্দিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিংকু প্রমুখ।
এ দিকে হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু ও তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কারের দাবী জানায় জানাজায় অংশগ্রহণকারী দলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সজীবের ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় লাশ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সজীব চন্দ্রগঞ্জস্থ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া গ্রামের জৈদের পুকুরপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী সজীব, সাইফুল পাটোয়ারী, মো. রাফি ও সাইফুল ইসলাম জয়ের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে সজীবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যদের ওপরও গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। পরে আহত অবস্থায় ওই চারজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সজীব, সাইফুল ও রাফিকে ঢাকায় প্রেরণ করে। সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে সজীবের মা বুলি বেগম বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু ও সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এতে আরো ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকার পপুলার হাসপাতালের নিবীড় পর্যবেক্ষণ কক্ষে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সজীব মারা যায়।