মেঘনায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ও অন্য কাজকর্ম না থাকায় অলস সময় পার করছে লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। নদীর পাড় ও ঘাটগুলোতে ঘুরেফিরে সময় পার করছে তারা। নিষেধাজ্ঞার সময় বরাদ্দের চালও পায়নি অনেক জেলে। আবার যারা পেয়েছে, সেখানেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। ফলে জেলে পরিবারগুলোতে নেই ঈদের আমেজ।
জেলা মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা নদী থেকে মাছ ধরে লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ জেলে জীবিকানির্বাহ করে। বিশেষ করে সদর উপজেলার মজু চৌধুরীরহাট, কমলনগর উপজেলার লুধুয়া, রায়পুর উপজেলার চরবংশীসহ প্রায় ২০টি জেলেপল্লিতে বসবাস করে এসব জেলে।
জাটকা সংরক্ষণ ও মাছের উৎপাদন বাড়াতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে আলেকজান্ডার থেকে চাঁপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার দুই মাসসহ চার মাস প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে প্রতি মাসে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তা অনেকেই পায়নি। আবার যারা পেয়েছেন সেখানেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে অপেশাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বজনদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ করেছে জেলেরা।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে নামতে পারছে না, আবার মাছ ধরার ওপর নির্বাহ করা ছাড়া আর কোনো উপায় না থাকায় ঈদ আনন্দ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলে পরিবারগুলো। ঈদ উপলক্ষে ছেলেমেয়েদের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দেওয়ার আশায় থাকেন। কিন্তু এখন সেটাই স্বপ্নের মতো।
জেলেরা জানায়, পরিবার, ছেলেমেয়ের লেখাপড়াসহ সবকিছু নির্ভর করে নদীতে মাছ শিকার করে। সরকারের দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার একমাস পার হতে চলছে। সামনে আরও একমাস। এখন আসছে ঈদ। অথচ ঘরে নেই চাল। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ঈদে নতুন জমা-কাপড়, চিনি সেমাই কেনার কথা। কিন্তু কিছুই করা যাচ্ছে না। কীভাবে ঈদ করব বা কাটাব সে দুশ্চিন্তায় প্রতিটি জেলে পরিবারে। তাই জেলেপল্লিতে নেই ঈদের আনন্দ।
জেলে শরীফ মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পেটের দায়ে নদীতে নামলেও জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। আবার জাল ও নৌকা পুড়িয়ে দেয় মৎস্য বিভাগ ও নৌ-পুলিশ। এই ভয়ে কেউ নদীতে মাছ ধরতে যেতে চায় না। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। ঈদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলে পরিবারগুলো।
জেলে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় ৪০ কেজি হারে প্রত্যেক জেলে চাল পাওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই এখনো তা পায়নি। আবার যারা পেয়েছেন, সেখানে ৪০ কেজির স্থলে ৩০–৩৫ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। এটি অপ্রতুল। এ চাল দিয়ে সংসার চলে না। প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে অন্য পেশার জেলেদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’
তবে জেলেদের কষ্টের কথা স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে ২৮ হাজার ৩০০ জেলের মাঝে ১ হাজার ১২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলেরাও পাবেন। এছাড়া ৪০ কেজির স্থলে বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কিনা, সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ভিজিএফের আওতায় আনতে কাজ করছে মৎস্য বিভাগ। বিতরণের অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’