লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য এবং স্মৃতি বিজড়িত খোয়াসাগর দিঘির পশ্চিম পাড়ে দেড় বছর আগে সাঁটানো ‘ডিসি পার্ক’ সাইনবোর্ড নিয়ে গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর আলোচনা চলছে। দিঘির পাড়ে “ডিসি পার্ক” সাইনবোর্ড দেখে অনেকেই অনুমান করছেন খোয়াসাগর দিঘির নাম পরিবর্তন করে “ডিসি পার্ক” নামকরণ করা হয়েছে। আলোচনা সমালোচনার সূত্রপাত শুরু হয় মূলত: সেখান থেকেই।
জানা যায়, খোয়াসাগর দিঘির ইতিহাস ঐতিহ্য সম্বলিত একটি নামফলক কয়েক বছর আগেই দিঘির পাড়ে স্থাপন করে রাখা হয়েছে। যা থেকে এখানে আগত পর্যটকরা খোয়াসাগর দিঘির প্রাচীন ইতিহাস খুব সহজেই জানতে পারেন। এদিকে দিঘির পশ্চিম পাড়ে ভিন্ন তফসিলের সরকারি খাস জমিতে ডিসি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে দেড় বছর আগে একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। দু’দিন আগে কোন এক পর্যটক দিঘির পাড়ে বেড়াতে গিয়ে ডিসি পার্ক সাইনবোর্ডের ছবিসহ দিঘির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোষ্ট করার সাথে সাথেই বিষয়টি সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। অনেকেই মনে করেন এই সাইনবোর্ডের মাধ্যমে খোয়াসাগর দিঘির নাম পরিবর্তন করে “ডিসি পার্ক” নামকরণ করা হয়েছে। যার কারণে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন এবং লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য বিবেচনায় রেখে দিঘিটি পুর্বের নামে বহাল রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রকৃতপক্ষে খোয়াসাগর দিঘির নামে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি দিঘির নাম পরিবর্তনের কোন ইচ্ছা বা পরিকল্পনাও জেলা প্রশাসনের নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকায় প্রায় ২২ একর ভূমি জুড়ে বিস্তৃত খোয়াসাগর দিঘি। এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকালে কুয়াশাচ্ছন্ন দেখা যায় বিধায় এ দিঘিটি খোয়াসাগর দিঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রায় পৌনে তিনশ’ বছরের পুরনো বিশাল আয়তনের দিঘিটি খোয়াসাগর দিঘি নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
জানা যায়, ১৭৫৫ সালের দিকে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় দিঘিটি খনন করেন। পরবর্তীতে জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় দিঘিটি পুনরায় সংস্কার করেন। প্রাচীন এই দিঘিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। দীর্ঘ সময় অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা দিঘিটির সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয় লক্ষীপুর জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই দিঘির পশ্চিম ও উত্তর পাড়ে শোভাবর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ের উন্নয়ন এবং শোভাবর্ধনের জন্য ইতোমধ্যেই বাজেট চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে দু’পাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের পর দিঘিটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে সময় কাটাতে আসেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, খোয়াসাগর দিঘিটি লক্ষ্মীপুর জেলার ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক। লক্ষ্মীপুর জেলার পূর্বতন জেলা প্রশাসকগণ লক্ষ্মীপুরের অধিবাসীদের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে খোয়াসাগর দিঘির পশ্চিম পাড়ে ভিন্ন তফসিলের সরকারি খাস জমিতে একটি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন। পূর্বের পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় খোয়াসাগর দিঘির পশ্চিম পাড়ে বিনোদন পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী খোয়াসাগর দিঘির নাম পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের নেই বরং এটির চার পাশ বাঁধাই করে সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে আরও আকর্ষনীয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শত বছর পূর্বের এই দিঘির নাম খোয়া সাগর দিঘি নামেই থাকবে বলে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান।
এছাড়া খোয়াসাগর দিঘির পাড়ে কিছু দিন পূর্বে খোয়া সাগর পার্কিং স্পট স্থাপন করা হয়। প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা সেখানে তাদের গাড়ি পার্কিং করে দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের সুবিধা বিবেচনায় দিঘির পাড়ে ওয়াশব্লক নির্মাণ এবং পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য ছাতা স্থাপন করা হয়েছে।
খোয়াসাগর দিঘির উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং দিঘির পূর্ব পাড় বাঁধাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট চেয়ে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।