আগামীকাল রবিবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৪২ হাজারের ভোটকেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে পোলিং অফিসার পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক নির্বাচনি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এদের মধ্যে আছেন ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং ৪২ হাজার ১৪৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার।
কিন্তু নির্বাচনে তাদের কাজ কী? নির্বাচনের দিন তাদের কে কী দায়িত্ব পালন করবেন- তা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
সবার শুরু করছি পোলিং এজেন্টেদেরকে দিয়ে যা পর্যাক্রমে স্তর হতে স্তরে সংকুচিত হয়ে রিটার্নিং অফিসারে গিয়ে শেষ হবে।
পোলিং এজেন্ট
পোলিং এজেন্ট বলতে প্রার্থীর প্রতিনিধিকে বোঝায়। নির্বাচনের সময় ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীর একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন, যাকে বলা হয় পোলিং এজেন্ট।
আরও পড়ুন— পরিবেশ নিয়ে আমরা কতটা সচেতন?
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ২২ অনুচ্ছেদের (১) দফার বিধান অনুসারে প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার নির্বাচনী এজেন্ট ভোটগ্রহণের পূর্বে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্য পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবেন।
পোলিং এজেন্টদের অবশ্যই স্থানীয় হতে হয়। পোলিং এজেন্টরা পোলিং অফিসারদের ভোটার শনাক্তে এক প্রকার সাহায্য করে থাকেন। আগে থেকেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে এই পোলিং এজেন্টদের নাম ইস্যু করিয়ে রাখতে হয়।
পোলিং অফিসার
প্রত্যেক ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে দুইজন করে পোলিং অফিসার থাকেন। সাধারণত ভোটকক্ষে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সহয়তার জন্যই তারা নিয়োজিত থাকেন। পোলিং অফিসারদের কাজই থাকে ভোটার তালিকা দেখে ভোট দিতে আসা ভোটারদের শনাক্ত করা। এসময় উচ্চস্বরে ভোট দিতে আসা ব্যক্তির নাম বলেন পোলিং অফিসার। এ সময় যদি কোন পোলিং এজেন্ট আপত্তি না করেন তবে ওই ব্যক্তির হাতে অমোচনীয় কালি দিয়ে দাগ দিয়ে দেন যাতে করে সহজে ভোট দাতাকারীদের চিহ্নিত করা যায়।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার
একটি কেন্দ্রে একাধিক বুথ বা ভোটকক্ষ থাকে। আর প্রতিটি ভোটকক্ষের দায়িত্বে থাকেন একজন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মূলত প্রিজাইডিং অফিসারের অধীনে কাজ করেন এবং তাকে সাহায্য করে থাকেন। বরাদ্দকৃত কক্ষে পোলিং অফিসারসহ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বসেন এবং কোন ভোটার কেন্দ্রে ঢুকলে তার পরিচয় শনাক্ত করেন। এছাড়া ভোটগ্রহণ শেষ হলে সব ব্যালট বক্স নিয়ে এক জায়গায় জড়ো করে ভোট গোনার কাজও করেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা।
আরও পড়ুন— লক্ষ্য একটাই, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোঃ শেখ হাসিনা
প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের মূল দায়িত্বে থাকেন, নির্বাচনের আগের রাত বা নির্বাচনের দিন ভোর থেকেই তার কাজ শুরু হয়। ব্যালট বাক্স, কাগজ, কালি, সিলসহ নানা নির্বাচনি সরঞ্জাম সংগ্রহ করে কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব থাকে প্রিজাইডিং অফিসারের ওপর। তিনি কোন ভোটকক্ষে উপস্থিত থাকেন না, সার্বিক কেন্দ্রের দায়িত্ব থাকে তার ওপর। পরদিন ভোটের সময় আলাদা কক্ষের জন্য সরঞ্জাম বণ্টন এবং প্রস্তুতির নেতৃত্ব দেন তিনি।
সাধারণত সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণে নির্বিঘ্ন করতে এবং একইসঙ্গে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন তিনি।
প্রিজাইডিং অফিসার
প্রতিটি নির্বাচনের কেন্দ্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন প্রিজাইডিং অফিসার। নির্বাচনের আগেই প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য আলাদা করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ এবং অন্যান্য বিষয়ে আচরণবিধি সম্পর্কে সার্বিক প্রশিক্ষণে দেওয়া হয়।
সহাকারী রিটার্নিং অফিসার
রিটার্নিং অফিসারের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার। সাধারণত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও’দের সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একজন রিটার্নিং অফিসারকে যেসব দায়িত্ব পালন করতে হয় তা এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার। প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ, প্রিজাইডিং অফিসার কারা হবে, ভোটের দায়িত্ব কারা পালন করবে- এ ধরনের তালিকা প্রস্তুত করতে রিটার্নিং অফিসারকে সাহায্য করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার।
রিটার্নিং অফিসার
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশন সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য একজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন— রবিবার থেকে মঙ্গলবার বিএনপির সর্বাত্মক অবরোধ
বাংলাদেশে কিছু উপ-নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করা হলেও ১৯৭২ সাল থেকে পরবর্তী সব জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ছিলেন জেলা প্রশাসকরা।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি জেলার ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুইজন বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন বাছাই, মনোনয়ন বাতিল, প্রার্থীর বৈধতা কিংবা প্রতীক বরাদ্দ –পুরো ভোট প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেন রিটার্নিং অফিসাররারা। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন যেসব নীতিনির্ধারনী সিদ্ধান্ত নেন, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে রিটার্নিং অফিসারদের ওপর।
এছাড়া প্রিজাইডিং, সহাকারী প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা তৈরি ও ভোটকেন্দ্র নির্বাচনের দায়িত্বও থাকে তাদের ওপর।
আইন অনুযায়ী ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা বা ভোটার বা নির্বাচনি ফলাফলের ওপর প্রভাব বিস্তার করার প্রমাণ পেলে কারণ দর্শিয়ে ওই ব্যক্তি যেই হোক না কেন- তাকে প্রত্যাহার করা এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করার এখতিয়ার থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার।
এছাড়া নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে যে ফলাফল আসে, তা একসঙ্গে করে রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন।
ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার নির্দিষ্ট ফর্মে পোলিং এজেন্টের নাম লিপবদ্ধ করেন এবং ভোটগ্রহণের পুরো সময় তিনি ভোটকক্ষে উপস্থিত থাকেন। আর ভোটগ্রহণের আগে ব্যালট বাক্স যে খালি আছে, সেটাও পোলিং এজেন্টেদের দেখাতে হয়। আবার ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গোনার সময়ও পোলিং এজেন্ট উপস্থিত থাকেন।