প্রথম ইউনিটের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের একদিন পর ঢাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রথম ইউনিটের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালান পৌঁছাল পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ইউরেনিয়ামবাহী গাড়ি রূপপুর প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করলে কর্মরত বাংলাদেশি ও রাশিয়ান নাগরিকরা স্বাগত জানান।
পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নাটোর-কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক দিয়ে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন— রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে আজীবন সেবা দেবে রাশিয়াঃ পুতিন
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে রাশিয়া থেকে দ্বিতীয় চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছে। প্রথম চালানের মতোই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালান জ্বালানি সড়কপথে রূপপুরে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও পাঁচটি চালান দেশে আসবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট সাতটি চালানে আসা জ্বালানি দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘রূপপুর এখন আর প্রকল্প নয়। এটা কিন্তু এখন একটি পারমাণবিক স্থাপনা। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাশিয়ার পক্ষ হতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পারমাণবিক জ্বালানি সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হয়েছে। প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজে সব ধরনের যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হয়েছে। রাশিয়া প্রতিটি মালামাল ও যন্ত্রপাতি আমাদের এখন বুঝিয়ে দিচ্ছে। এখন কমিশনিং শুরু হবে।’
আরও পড়ুন— রূপপুরে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অনলাইনে যোগ দিয়েছেন হাসিনা-পুতিন
সংশ্লিষ্ট সনদ লাভের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও প্রস্তুত করে তাদের পদায়ন করা হয়েছে জানিয়ে ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। কোথায় কোনো ফাঁক রাখা হয়নি। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সুযোগ নেই।’
এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো আনার সময় মহাসড়কে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তাবলয় ছিল। নিরাপত্তার জন্য ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত পাবনা-নাটোর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইউরেনিয়াম পৌঁছার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অপরদিকে, প্রথম চালান আসার পর রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি এরই মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় উন্নীত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে জ্বালানি সনদ হস্তান্তর করেছে রাশিয়া।
আরও পড়ুন— ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস, চট্টগ্রামে ভূমিধসের শঙ্কা
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রাশিয়া থেকে বিমানযোগে ঢাকায় ইউরেনিয়াম পৌঁছানোর পর ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে সড়ক পথে রূপপুরে আনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে রাশিয়া জ্বালানি সনদ হস্তান্তর করেছে। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২৪ সালের মার্চে প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। পরের বছর ২০২৫ সালের মাঝামাঝি দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দুটি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা পেয়েছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।