ভারতের উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে তিস্তা নদীর একটি বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারী ঢল বাংলাদেশ অংশে ধেয়ে আসছে। এর ফলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশেও পানি প্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ভয়াবহ বন্যার আশংকা থাকায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকিং করছে। একই সঙ্গে চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদে স্থানে সরে যেতে বলছেন তারা।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অবস্থিত তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.২০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার ওপরে (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৩৯ সেন্টিমিটার। তখন পানি বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ার ফলে তিস্তা-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে এরই মধ্যে পানি উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন— উলিপুরে টিসিবি’র পণ্য আত্মসাতের অভিযোগ
তবে বিকেল ৫টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তিস্তার উৎসে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে চুংথাং হ্রদে পানি বেড়ে গেছে। হ্রদের পানি আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়ে বাঁধ খুলে দেওয়া হলে ভাটিতে নদীর পানির স্তরের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ভারতের গজলডোবা পয়েন্টে তিস্তার পানির সমতল গত মধ্যরাতে প্রায় ২৮৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। দোমুহুনী পয়েন্টে বুধবার সকালে প্রায় ৮২ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং তা অব্যাহত আছে।
পাউবো আরও জানায়, তিস্তা নদীর পানি সমতল ডালিয়া পয়েন্টে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এরপর মধ্যরাত পর্যন্ত কিছুটা হ্রাস পেয়ে পরবর্তীতে পুনরায় পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন— লক্ষ্মীপুরে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উদযাপন
বুধবার বিকেল ৩টার তথ্য অনুযায়ী তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলেন, সকালবেলা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে দুপুরের দিকে এমনভাবে পানি বাড়ছে যা বলার বাইরে। মুহূর্তের মধ্যে চরের ধানক্ষেত তলিয়ে গেল।
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘একদিকে উজানের ঢল, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। উত্তর খড়িবাড়ী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পানি। নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন— ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছুঁইছুঁই
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল থেকেই সতর্কতা জারি করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনও করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, ‘উজানে ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তাসহ আশপাশের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাইকিং করে সতর্কতা জারি করে নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা মানুষকে সচেতন করছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।