দেশের বাজারে নিত্যপণ্য পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তাতে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামীকাল সোমবার (৫ জুন) থেকে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
রবিবার (৪ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।গত বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজধানীর বাজারে এখন মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। এত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কেনা অনেকের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল (সোমবার) থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন- কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দামে বাজারে ছড়িয়েছে ঝাঁজ
এর আগে সম্প্রতি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১৪ মে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে সভা করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ওই সভায় কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার জানান, উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। অথচ বাজারে দাম কিছুটা বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয় বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। দাম বাড়তে থাকলে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়। সেটা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক দিন ধরেই। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তবে যেহেতু মানুষের কষ্ট হচ্ছে, দাম বেড়ে যাচ্ছে তাই মন্ত্রণালয় আমদানির কথা ভাবে।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে কয়েক গুণ। মাস-দেড়েক আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বর্তমানে তা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন- হিলিতে কমেছে ভারতীয় পেঁঁয়াজের দাম
জানা গেছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সভায় জানানো হয়, বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল। কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল। সে জন্য পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবার আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কৃষি মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন- আমদানি বন্ধের অজুহাতে বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম
এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে কয়েক গুণ। মাস-দেড়েক আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বর্তমানে তা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে।