প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কবরস্থানে’ পাঠানোর হুমকি দেওয়া রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চাঁদকে আরএমপির কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আনিসুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সকাল সোয়া ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভেড়ীপাড়া মোড় থেকে আরএমপি আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি প্রাইভেট কারে করে রাজশাহী থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন চাঁদ। গোপন সংবাদে ওই কারে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি বিশেষ টিম।
আরও পড়ুন- জাতীয় কাতার সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
আরএমপি কমিশনার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সারা বাংলাদেশে তার নামে মামলা আছে। হাইকোর্ট তার গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। কয়টা মামলা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে আরএমপিতে চারটি মামলা রয়েছে। জেলায় যে মামলাগুলো সেই বিষয়ে ব্রিফ করবেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন।
এদিকে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন জানিয়েছেন, আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে, এসব মামলায় তিনি আত্মসমর্পন করতে আদালতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নগরীর ভেড়িপাড়া মোড় থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির এক জনসমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘হুমকি’ দেন আবু সাঈদ চাঁদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আর ২৭ দফা বা ১০ দফা নয়। শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।’
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
তার ওই বক্তব্যের ভিডিও দুদিন পর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক মহলসহ সব জায়গায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর রাজশাহীতে তিনটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন পোশাজীবী সংগঠন। এ সময় চাঁদকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি তোলা হয়। আবু সাঈদ চাঁদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং রাজশাহী জেলা কমিটির আহ্বায়ক। তিনি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। একাধিকবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচিত হতে পারেননি।
ঘটনায় গত ২২ মে (সোমবার) পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করা হয়। মামলার বাদী পুঠিয়ার নামাজগ্রামের মৃত সেফাতুল্লাহর ছেলে মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৬১)। মামলায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর ৬(২) ধারায় সন্ত্রাসমূলক বক্তব্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন- গোবিন্দগঞ্জে জেলা পুলিশের সচেতনতা মূলক সভা
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ মে (শুক্রবার) রাজশাহী নগরীর পুঠিয়া থানার শিবপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চারঘাট থানার মাড়িয়া গ্রামের মোঃ আবু সাঈদ চাঁদ (৬৫) সভাপতিত্ব করেন। তিনি বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনগণের সামনে উসকানিমূলক বক্তব্যে বলেন, ‘আর ২৭ দফা, ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই, এক দফা শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে এবং শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করা দরকার আমরা করবো ইনশাআল্লাহ্।’
এজাহারে আরও বলা হয়, তার এই বক্তব্যে উৎসাহসহ পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্ববায়ক মোঃ আমিনুল হক মিন্টু ও আল মামুন, বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক দুলাল এবং বিএনপি নেতা মোঃ আবু বকর সিদ্দিকসহ দলীয় বেশকিছু নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সমর্থন করেন।
বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামির এই বক্তব্যে পুঠিয়া উপজেলাসহ রাজশাহী এলাকার জনসাধারণের ব্যাপক অংশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি সর্বসাধারণের সামনে তার সন্ত্রাসীমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ জনগণকে প্ররোচিত করার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংগঠনের লক্ষ্যে দলীয় কর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য উৎসাহ দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।