দুটি ম্যাচের চিত্রনাট্য সম্ভবত এক হাতে লেখা! যেখানে গোল আছে, কামব্যাক আছে আর আছে হৃদয় ভাঙার গল্প। ওই গল্পের শেষ লেখা হয়েছে টাইব্রেকারে। সেখানে ব্রাজিলের বিদায় লেখা হলেও আর্জেন্টিনা জিতেছে ৪-৩ গোলে। ডাচদের বিদায় করে উঠে গেছে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। বাঁচিয়েছে ল্যাতিনের স্বপ্ন।
কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি অপ্রতিরোধ্য নেদারল্যান্ডস ও লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে দুই দলের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই শুরু হয়।
নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা। এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও ডাচদের টাইব্রেকারে হারিয়েছিল লিওনেল মেসির দল।
১২০ মিনিট শেষেও সমতা, টাইব্রেকারে গড়ালো ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ের ১৫ মিনিট শেষেও ২-২ গোলে সমতায়। শেষমেশ ম্যাচ গড়িয়েছে ট্রাইবেকারে। এর আগে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারায় ক্রোয়েশিয়া।
আরও পড়ুন- টাইব্রেকারে ব্রাজিলের হেক্সার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে সেমিতে ক্রোয়েশিয়া
তিন তিনবার ফাইনালে হেরে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা হয়নি নেদারল্যান্ডসের। এর মধ্যে একবার তাদের স্বপ্ন ভেঙেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালের ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল ডাচরা। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত তাদের শেষ বিশ্বকাপ ২০১৪-তে এই আর্জেন্টাইনদের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে সেমিফাইনালে নিতে হয় বিদায়।
অপেক্ষাকৃত সহজ গ্রুপে সেনেগালকে ২-০ গোলে হারায় নেদারল্যান্ডস। ইকুয়েডরের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র আর শেষ ম্যাচে কাতারকে ২-০ তে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে তারা। রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলায় কম সমালোচনা শুনতে হয়নি কোচ লুইস ফন গালকে। নকআউটে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সমালোচকদের মন কিছুটা হলেও গলাতে পেরেছে ডাচরা।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা সৌদি আরবের কাছে হেরে গ্রুপ পর্বে বিদায়ের সাইরেন শুনতে পাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে মেসির অধরা বিশ্বকাপ ছোঁয়ার মিশন বাঁচিয়ে রাখে আলবিসেলেস্তেরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতলেও সকারুরা গোল শোধ করায় সম্ভবত শেষ কয়েক মিনিট দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল লিওনেল স্কালোনির দলের।
আরও পড়ুন- মদনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত
নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডাররাও মেসি চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে ভীত নয়। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর মুখোমুখি হওয়ার আগে কাঁপছেন না জুরিয়েন ট্রিম্বার, আরেক ডিফেন্ডার নাথান আকেকে পাশে নিয়ে তিনি বললেন, ‘আমি কি কাঁপছি (মেসির মুখোমুখি হওয়া নিয়ে)? সৌভাগ্যবশত না। তার বিরুদ্ধে খেলা দারুণ চ্যালেঞ্জ। মেসি চমৎকার ফুটবলার। কিন্তু আমরা শুধু মেসির বিপক্ষে খেলবো না। এই সমস্যার সমাধান শুধু আমরা দুজন করবো না। পুরো দল নিয়ে করতে হবে।’
আকে বললেন, ‘তাকে থামানো খুব কঠিন। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় সম্ভবত সে কিন্তু আমাদের অন্য খেলোয়াড়দের নিয়েও ভাবতে হবে।’ ডাচদের রক্ষণের আরেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ভার্জিল ফন ডাইক, ‘এটা মেসি বনাম আমার কিংবা নেদারল্যান্ডসের নয়, লড়াইটা নেদারল্যান্ডস বনাম আর্জেন্টিনার।’ মেসিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু আর্জেন্টিনা ম্যাচে কী করতে পারে সেটা নিয়ে সতর্ক। তারা অসাধারণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দারুণ একটি দল। ম্যাচের সব বিভাগে আমাদের ভালো করতে হবে।’
সব মিলিয়ে দুই দলের দেখা হয়েছে ৯ বার, ৪-৩ এ এগিয়ে ডাচরা। বিশ্বকাপে তো তারা চেনা প্রতিদ্বন্দ্বী, এনিয়ে ষষ্ঠবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল, যার শুরু ১৯৭৪ সালে। গ্রুপ ম্যাচে ৪-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। চার বছর পরের বিশ্বকাপ ফাইনালে ডাচদের হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জেতে তারা। আর ৯৮-এর কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় আলবিসেলেস্তেদের। এরপর বিশ্বমঞ্চে শেষ দুইবারের দেখায় নির্ধারিত সময় হয়েছে ড্র। ২০০৬ সালে গ্রুপ পর্বে গোলশূন্য ড্র হয়। ২০১৪-তে গোলশূন্য নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় শেষে পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে জেতে আলবিসেলেস্তেরা। এবারের ফল কোনদিকে গড়ায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।