গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত, নিবন্ধন নং ১১৪
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বাণিজ্য
  3. আইন-বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. কৃষি ও প্রকৃতি
  7. খেলাধুলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চাকরি
  10. জাতীয়
  11. ধর্ম
  12. নির্বাচন
  13. প্রবাসের খবর
  14. ফিচার
  15. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  16. বিনোদন
  17. বিশেষ প্রতিবেদন
  18. রাজনীতি
  19. শিক্ষাঙ্গন
  20. শেখ হাসিনার পতন
  21. সম্পাদকীয়
  22. সারাদেশ
  23. স্বাস্থ্য
  24. হট আপ নিউজ
  25. হট এক্সলুসিভ
  26. হাই লাইটস

বুক চিতিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গনঃ ‘জুলাই শহীদ দিবস’ স্মরণে শহীদ আবু সাঈদ

জে এম আলী নয়নঃ
জুলাই ১৬, ২০২৫ ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ
  • আবু সাঈদ হত্যাঃ বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

    শহীদ আবু সাঈদ | সংগৃহীত ফাইল ছবি

Link Copied!

১৬ জুলাই— একটি দিন যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। ২০২৪ সালের এই দিনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশি গুলির মুখে দাঁড়িয়ে বুক পেতে দিয়ে বলেছিলেন, বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। সেই গুলিতে তার মৃত্যু আন্দোলনকে দাবানলে পরিণত করে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

আবু সাঈদের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এ দৃশ্য সারাদেশ ও বিশ্ববাসী দেখেছে। তার মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রপান্তরিত করে মানুষ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে। আবু সাঈদের আত্মত্যাগ আন্দোলনের প্রধান টার্নিং পয়েন্ট।

আন্দোলনের সূচনায় আবু সাঈদের ভূমিকা ছিল কাণ্ডারির মতো। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে যখন এটি রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী বৃহত্তর সংগ্রামে, তখন রংপুর হয়ে ওঠে প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে নগরীর অলিগলি পর্যন্ত প্রতিদিন মিছিল ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রতিবাদে পরে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ—  স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলগুলো ধীরে ধীরে গণজোয়ারে রূপ নেয়।

তবে আন্দোলনকে দমন করতে নামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা। পুলিশের ছত্রছায়ায় তারা হামলা চালায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, গুলি—সবই বর্ষিত হয় নিরস্ত্র ছাত্রদের দিকে।

১৬ জুলাই সকালে একটি বিশাল মিছিল রংপুর জিলা স্কুল থেকে যাত্রা করে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের কাছে পৌঁছালে শুরু হয় সংঘর্ষ। ছাত্রলীগ ও সংশ্লিষ্ট দলীয় কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর একাধিকবার হামলা চালায়। পুলিশও প্রতিরোধে থাকা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সেই সময় আবু সাঈদ একাই সামনে দাঁড়িয়ে যান। তার সেই দৃশ্য আজও চোখে লেগে আছে প্রত্যক্ষদর্শীদের। দুই হাত প্রসারিত করে তিনি বুক চিতিয়ে বলছিলেন— “কর গুলি!”

তার সেই সাহসিকতার মুহূর্তে টার্গেট করে গুলি চালায় পুলিশ। সেখানেই তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে ছিল একাধিক গুলির ক্ষত, রক্তাক্ত মুখ নিথর পড়ে ছিল হাসপাতালের বিছানায়।

সেই দিনের ঘটনার বর্ণনায় আবু সাঈদের সহযোদ্ধা ও সাবেক আন্দোলন সমন্বয়ক শাহারিয়ার সোহাগ বলেন, আন্দোলনের শুরুতে আমরা ছিলাম মাত্র ৮ থেকে ১০ জন। ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রতিনিয়ত হুমকি দিতো। একবার পোমেল বড়ুয়া আবু সাঈদকে মারধরও করে। কিন্তু এসবের পরেও আমরা থামিনি। আর আবু সাঈদের সাহস ছিল অতুলনীয়।

শিক্ষার্থী জেবিন জানালেন, গুলির মুহূর্তে আমি আবু সাঈদের কাছাকাছি ছিলাম। সে মৃত্যুকে ভয় পায়নি, বরং আলিঙ্গন করেছিল। তার সেই দৃশ্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।

ছাত্র ফ্রন্ট নেতা রাজু বাশফোর জানান, আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমরা চার-পাঁচজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ওখানে পৌঁছার আগেই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। পুলিশ তাকে টার্গেট করে হত্যা করেছে।

শহীদের লাশ নিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে জানান, আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে পুলিশ। এরপরও অনেক খুনি চাকরিতে বহাল, কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। মরদেহ নিয়েও নাটক করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, শুনেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আমি ন্যায়বিচার চাই।

বড় ভাই রমজান আলীও দাবি করেন, আমরা সুবিচার চাই, সেইসঙ্গে যেন নিরপরাধ কাউকে শাস্তি না পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পুলিশের গুলি আবু সাঈদকে হত্যা করেছে, এটাকে আমরা ঠাণ্ডা মাথায় খুন বলতে পারি। সে এক যুদ্ধের শহীদ।

এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং আবু সাঈদের স্মৃতিকে ধারণ করে ১৬ জুলাই জুলাই শহীদ দিবস হিসেবে পালন করছে ছাত্র-জনতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী কবর জিয়ারত, র‍্যালি, আলোচনা সভা, দোয়া-মাহফিল ও খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

বেরোবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একবাক্যে বলেছেন— এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারিগর, অর্থদাতা এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধু একটি ছাত্রকে হত্যাই নয়, তার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে একটি স্বপ্ন, একটি স্বতন্ত্র স্বদেশের আকাঙ্ক্ষা।

এদিকে, শহীদ আবু সাঈদ দিবস উপলক্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপি নানান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কবর জিয়ারত, শো র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

অন্যদিকে শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের পক্ষ থেকে দিনব্যাপি মিলাদ, দোয়া মাহফিল, দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, আলোচনাসহ নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

 

 

.
শীর্ষ সংবাদ | নয়ন

জে এম আলী নয়ন

জে এম আলী নয়ন

সাব এডিটর

সর্বমোট নিউজ: 5482

Share this...
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
  • আমাদেরকে ফলো করুন…