কালের বিবর্তনে আধুনিক সেচযন্ত্রের ভিড়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেচ যন্ত্র “দোন”। শত শত বছর থেকে মানুষ কৃষি কাজে পানি সেচের জন্য কৌশল ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম পদ্ধতি ছিলো এই “দোন”। যার সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা হতো।
এই দোন দিয়ে ফসলি জমিতে পানি সেচ করলে খরচা অনেক কম হয়। ক্রস আকারে দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। এক অংশে দোনের মাথায় অন্য অংশে মাথায় মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে একসঙ্গে পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি সেচ দিলে দ্রুত সেচের কাজ হয়ে যায়।
আম অথবা কাঁঠালজাতীয় গাছের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝ খানে খোদাই করে ড্রেন তৈরী করে পানি সেচ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতো। কোন কোন স্থানে নারিকেল, তাল, সুপারি গাছ দিয়েও এ দোন তৈরী করা হতো। আবার কেউ কাঠের তক্তা দিয়েও এই দোন তৈরী করতো।
বয়ষ্কদের কাছ থেকে যানা যায়- আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন ও বাঁশের তৈরী অথবা টিন ও কাঠের তৈরী দোন ব্যবহার হতো। নদী, খালবিল বা জলাশয় থেকে কৃষকরা ফসলি জমি পানি সেচের জন্য এই দোন ব্যবহার করতো। উঁচু- নিচু জমিতে পানি সেচ দিতে দোন ছিলো অতুলনীয়। গ্রাম বাংলার কৃষকদের আবিষ্কার ছিলো এই দোন।
বর্তমানে দিন যাচ্ছে দেশ আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে। এখন থেকে প্রায় ২০-৩০- বছর আগেও টিন ও কাঁঠের তৈরী দোন ব্যবহার করে ফসলি জমিতে পানি সেচ করা হতো এতে খরচ যেমন কম হতো তেমনি ভূগর্ভস্ত পানির উপর চাপ না করিই ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারও হতো।
আধুনিক প্রযুক্তির সেচযন্ত্র যেমন, শ্যালো, ডিপ, এলএলপিসহ বিভিন্ন ধরণের সেচযন্ত্র আসায় সেই প্রাচীন যুগের কৃষকদের তৈরী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দোন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আধুনিকতার ছোয়ায় নতুন নতুন সেচযন্ত্র তৈরী হয়েছে যার ফলে খরচাও অনেক বেড়ে গেছে। দেশে বর্তমানে সব জমি শতভাগ সেচের আওতায় আসায় দোন এর সাহায্যে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়না। ফলে কৃষকরা এখন আর দোন ব্যবহারও করে না।