মহান আল্লাহ তাআলা যে ভূখণ্ডকে বিশেষ সম্মাননা দান করেছেন তার নাম ইয়েমেন। এটি আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এর আয়তন পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৯৭০ বর্গ কিলোমিটার। সুউচ্চ পর্বতমালা নৈসর্গিক সৌন্দর্যে শোভিত একটি দেশ ইয়েমেন।
পবিত্র মক্কা-মদিনার পর যা অন্য কোনো দেশের ব্যাপারে বলা হয়নি। অনেক নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম ও বুজুর্গদের ভূখণ্ড হিসেবে প্রসিদ্ধ এ ছোট্ট দেশটি। হাদিসের মধ্যে এই দেশের অধিবাসীদের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। একবার রাসুল (সাঃ) আকাশের দিকে মুখ করে বললেন, ইয়েমেনের মানুষজন তোমাদের কাছে মেঘমালার মতো এসেছে তারা বিশ্বাসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৭৫৮)
রাসুল (সাঃ) নিজেও ইয়েমেনের
রাসুল (সাঃ) নিজেকেও ইয়েমেনের অধিবাসী দাবি করে ইয়েমেনকে বিশেষ সম্মান করেছেন। এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ঈমান ইয়েমেনের এবং তারা আমার থেকে, আমার প্রতি সম্পৃক্ত অবস্থানের দিক থেকে তারা যত দূরেই হোক। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৬৬২৪)
রাসুল (সাঃ) নিজেকে ইয়েমেনের দিকে সম্পৃক্ত করার কারণ এই দারায় যে ইয়েমেন হলো আরবদের পূর্বপুরুষ ‘কাহতান’ পুত্রের নাম। আর তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আঃ)-এর সন্তানদের অন্যতম একজন। এভাবে রাসুল (সাঃ)-এর বংশপরম্পরা তার সঙ্গে মিলিত হয়। কিংবা হাদিসের অর্থ, ইয়েমেনের অধিবাসীদের রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহার আমার পছন্দনীয়, তাই আমিও যেন ইয়েমেনের অধিবাসী।
কোমল হৃদয়ের অধিকারী
রাসুল (সাঃ) ইয়েমেনবাসীর প্রশংসা করে বলেছেন, তারা অত্যন্ত কোমল ও নম্র হৃদয়ের অধিকারী। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, ইয়েমেনবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল। আর মনের দিক থেকে অত্যন্ত দয়াবান। ফিকহ হলো ইয়েমেনিদের, আর প্রজ্ঞা হলো ইয়েমেনিদের। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৯০)
ইয়েমেনবাসী বিশ্বস্ত
ইয়েমেনবাসীকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বিশ্বস্ত বলে ঘোষণা করেছেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রাজত্ব কুরাইশদের মধ্যে, বিচারবিধান আনসারদের মধ্যে, (সুমধুর সুরে) আজান হাবশিদের মধ্যে এবং আমানতদারি আজাদ অর্থাৎ ইয়েমেনবাসীদের মধ্যে। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৯৩৬)
মুসাফাহার প্রচলন শুরু হয় যেখান থেকে
ইয়েমেনবাসীর অন্যতম আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা সর্বপ্রথম মুসাফাহার প্রচলন চালু করে। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, একদা ইয়ামানবাসীরা এসে উপস্থিত হলে রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমাদের কাছে ইয়েমেনবাসীরা এসেছে। আর এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা করেছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫২১৩)
যাদের জন্য রাসুল (সাঃ) বিশেষ দোয়া করেছেন
রাসুল (সাঃ)-এর পবিত্র মুখে ইয়েমেনবাসীর জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে। ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের শামে (সিরিয়া) ও ইয়েমেনে বরকত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নজদের। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাঃ) তখন বললেন, সেখানে তো আছে ভূমিকম্প ও ফিতনা-ফ্যাসাদ। আর শয়তানের শিং সেখান থেকেই বের হবে (তার উত্থান ঘটবে)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৩৭)
হাউসে কাউসার থেকে প্রথম পানি পান
প্রিয় নবী (সাঃ) তাদের ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন যে কিয়ামতের সেই ভয়াল দিনে সর্বপ্রথম তারা হাউসে কাউসার থেকে পানি পান করবে। সাওবান (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, আমি আমার হাউসের পাশে থাকব। ইয়েমেনবাসীর জন্য সর্বসাধারণ লোককে সরিয়ে দেব। আমি আমার লাঠি দিয়ে হাউসের পানির ওপর আঘাত করব, যাতে তাদের ওপর তা প্রবাহিত হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৮৮৪)
এর অর্থ অন্য মানুষকে রাসুল (সাঃ) তাড়িয়ে দেবেন। শুধু ইয়েমেনবাসীকে পানি পানে প্রাধান্য দেবেন। নিঃসন্দেহে এটা তাদের জন্য সম্মান ও গৌরবের। তারা ইসলামের জন্য যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তারই বরকত এটি।