আগামিকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের ঢল এখন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে আসছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারী) দুপুরে ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ময়দানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে।
করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর ইজতেমা বন্ধ থাকার পর এ বছর ইজতেমায় বেশি সংখ্যক মুসল্লি যোগ দেবেন বলে আশা করছেন ইজতেমার আয়োজকেরা।
আরও পড়ুন- জানুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে ভোটঃ ইসি রাশেদা
রাজধানী ঢাকাসহ টঙ্গীর চারপাশ থেকে সব মানুষের স্রোত মিশে যাচ্ছে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে, ট্রেনে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে মুসল্লিরা আসছেন ইজতেমা ময়দানে।
এবার ইজতেমা ময়দানকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। প্রচণ্ড শীত ও শৈত-প্রবাহ উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের চটের ছাউনির নিচে অবস্থান নিয়েছেন।
১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুঁটির উপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে করা হয়েছে আবাসস্থল। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে ২৫টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার আয়োজক কর্তৃপক্ষ। আগামী দুই দিনে আরও বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন- একজন মানবিক পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ
ইজতেমা ময়দানের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের খাবারের জন্য রান্নার কাজ করছেন মুসল্লিরা। অনেকে নিজের বিছানাপত্র ঠিকঠাক করছেন। কেউ রয়েছেন ইবাদতে মশগুল।
শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর ধারাবাহিকভাবে চলবে তিন দিনের ইজতেমার সকল কার্যক্রম। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা।
টাঙ্গাইল থেকে আসা মুসল্লি আশরাফ আলী বলেন, এক চিল্লা শেষ করে বুধবার ইজতেমা ময়দানে চলে এসেছি। এখানে ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের জন্য কিছু মেহনত করছি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনের জন্য মেহনত করছি। ইহকাল আমরা যেভাবে কাটাচ্ছি তাতে পরকালের জন্য কতটুকু আমল ও সঞ্চয় করতে পেরেছি তার জন্য চিন্তা করছি। নিজের ইমানকে আরও মজবুত করছি।
রংপুর থেকে আসা ইব্রাহিম মিয়া জানান, ইজতেমায় এসে বিভিন্ন বিষয়ে ওপর আলোচনা শুনে নিজের ইমানকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করি। আখিরাতের পুঁজি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় তার জন্য মেহনত করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে মীর মার্কেটে ৩ দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি
এদিকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তা দেওয়ার সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইজতেমায় আসা, থাকা ও যাওয়া এ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে সার্বিক পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইজতেমায় আগত সাধারণ মানুষের ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের সুবিধার্থে আমরা ম্যাপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকারের নির্দেশনা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পনা করে কোন বিভাগের গাড়ি কোথায় পার্কিং করা থাকবে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা, কোন রাস্তা কখন খোলা বা কখন বন্ধ থাকবে সে নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে।
ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাক ও পোশাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
বুধবার সকালে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইজতেমা মাঠ পরিদর্শনে এসে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।