প্রবাসী আয় কম, আশানুরূপ রপ্তানি আয় না আসা এবং বিদেশি ঋণ কমে যাওয়া সহ দেশের বিভিন্ন কারণে ডলার সংকটে পড়েছে দেশে। ফলে রিজার্ভ থেকে আমদানি ব্যয়সহ অন্যান্য দায় মেটাচ্ছে সরকার। এতে ধারাবাহিকভাবে কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায় বুধবার (১৮ অক্টোবর) পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। তার মানে, তিন মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ২৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ১৩ জুলাই থেকে বিপিএম-৬ নিয়মে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী, দেশে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৫৬ কোটি) ডলার।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ (১৮ অক্টোবর) কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি (২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন) ডলার। আইএমএফ হিসাব-পদ্ধতি ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬)’ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯৫ কোটি (২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন) ডলার।
আরও পড়ুন— উল্লাপাড়ায় ২ কাউন্সিলরকে মারপিটের অভিযোগে ইউপি সদস্য সহ ৩ জন আটক
এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক জানান, প্রকৃত রিজার্ভ কত আছে এটা জানা নেই। তবে আমরা যেটা প্রকাশ করি সেই তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বিপিএম ৬ হিসাবে এখন ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। আইএমএফ’র ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল চলতি বছরের জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। কিন্তু গত দুই প্রান্তিকে তা অর্জন করতে পারেনি, ডিসেম্বরেও তা পারবে না। দেশে এখন ডলারের তীব্র সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমঝোতার মাধ্যমে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ’র পর্ষদ সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন (৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার) ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হতে পারে।