দেশের জনগণ সবচেয়ে বড় সম্পদ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের দাবি-সমস্যার কথা শুনতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্থানীয় সরকারকে স্মার্ট ও সেবামুখী করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে আমরা সক্ষম হব, ইনশালল্লাহ।’
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস’ উপলক্ষে বুধবার দেওয়া এক বাণীতে সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে অত্যন্ত আনন্দিত তিনি। এই শুভক্ষণে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সদস্য এবং এদেশের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুরে স্ত্রী ও শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যা
এ দিবসের মাধ্যমে মাটি ও মানুষের আরও কাছাকাছি যাওয়া এবং জনগণকে সেবা প্রদানের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন তিনি। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শনের মাধ্যমে এদেশে স্থানীয় সরকারের মূল ভিত্তিভূমি রচিত হয়, যা তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সুস্পষ্ট করেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি অন্যতম পরিকল্পনা ছিল— ‘নতুন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো রাস্তা, ড্রেন ও সেচ ব্যবস্থার অবকাঠামো তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ, জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন শিক্ষা এবং সমাজকল্যাণ পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে।’ সে পরিক্রমায় সারা দেশে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বহুমাত্রিক সুবিপুল কার্যক্রমে কর্মতৎপর ও নিবেদিত।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার বিগত সাড়ে ১৪ বছরে পল্লীখাতে ৭৫ হাজার ৮২৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন এবং চার লাখ ৩৫ হাজার ৩০৭ মিটার নতুন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ অথবা পুনর্নির্মাণ করেছে। আমরা এক লাখ ২১ হাজার ৬২৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও এক লাখ ৫৮ হাজার ৫৭৯ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ পুনর্বাসন করেছি, এক হাজার ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ৪০৬টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ/সম্প্রসারণ করেছি।’
আরও পড়ুন- ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ নীতি সহায়তা দিতে চায় সরকার’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘তাছাড়া দুই হাজার ৮৭৪টি গ্রোথ সেন্টার ও হাট-বাজার উন্নয়ন, এক হাজার ৪৯১টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ এবং বিভিন্ন সড়কে ছয় হাজার ৯৯১ কিলোমিটার বৃক্ষরোপণ করেছি। পাশাপাশি নাগরিক জীবনমান উন্নয়নে ১১ হাজার ২৬৮ কিলোমিটার সড়ক ও ফুটপাত, চার হাজার ৬২৫ কিলোমিটার ড্রেন, ১৭ হাজার ৯৭২ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট, ৪৭টি বাস ও ট্রাক টার্মিনাল, ৫৭ হাজার ২২৪টি ল্যাট্রিন ও কমিউনিটি ল্যাট্রিন, ৫৫টি কমিউনিটি সেন্টার, পাঁচটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং ২৬৯টি ডাস্টবিন নির্মাণ করেছি। এছাড়া ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ খাতে এক হাজার ৮৯৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও উন্নয়ন, এক হাজার ৮৭৪টি পানি সম্পদ অবকাঠামো/রেগুলেটর নির্মাণ, সাত হাজার ২০৫ কিলোমিটার খাল খনন অথবা পুনঃখনন এবং ২০টি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম।