চলছে আমন ধান রোপণের মৌসুম। সাধারণত এসময়টা বর্ষাকাল হওয়ায় আমন ধান রোপণ করা হয় বৃষ্টির পানি দ্বারা। কিন্তু বর্ষাকাল যায়যায় অবস্থা তবুও দেখা নেই বৃষ্টির। ফলে ধান রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধানচাষীরা। উপজেলায় বেশকিছুদিন আগে হওয়া বৃষ্টির জমা পানিতে নিম্নাঞ্চলের জমিগুলোতে ধান রোপণ করা হলেও তা দু-একদিনের দিনের মধ্যে শুকিয়ে যাবে। কিন্তু বাকি অধিকাংশ কৃষি জমিগুলোতে পানি না থাকায় সেখানে ধান রোপণ সম্ভব হচ্ছে না! কয়েকদিনের রৌদ্রের তাপে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আমন ধান রোপণের মৌসুম চলে যাচ্ছে। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে ধান চাষীদের। এমতাবস্থায় সেচযন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়ে ধান রোপণের পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শমত অনেক কৃষককে সেচ দিয়ে ধান রোপণ করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন- উলিপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এর উদ্বোধন
সরেজমিনে উপজেলার গুনাইগাছ, থেতরাই, দলদলিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এসব এলাকার ধান চাষীরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা না করে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের সাহায্যে কৃষিজমিতে পানি দিয়ে ধান রোপণ করছেন। ফলে আমন মৌসুমে খরচ বেড়ে যাবে ধানচাষীদের।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফরা গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমনের রোয়া গাড়ি (ধান রোপণ) বৃষ্টির পানি দিয়ে। কিন্তু বেশ কয়দিন ধরে কোন ঝড়িবৃষ্টি নাই। সময় চলি যাচ্ছে কিন্তু পানির অভাবে রোয়া গাড়তে (ধান রোপণ) পারছি না। পানি থাকতে কয়েকটি জমিতে রোয়া গাড়ছি, কোনদিন যে সেগুলাও শুকি যায় সেই চিন্তায় আছি। বৃষ্টি না হইলে শ্যালো মেশিন দিয়া পানির ব্যবস্থা করা লাগবে।’
আরও পড়ুন- কোরআনে বর্ণিত জাহান্নামের বিভিন্ন নাম
দলদলিয়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বৃষ্টি নাই বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে জমিতে ধান রোপণ করছি। এ মৌসুমে ধান উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়। কিন্তু এবার সেচের সাহায্যে ধানচাষ করায় খরচ বেশি পড়বে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা মিলে রোপা আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর। যার মধ্যে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও ১৮০ হেক্টর বীজতলা রোপণের জন্য প্রস্তুত আছে।
আরও পড়ুন- রামগড় ৪৩ বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদ জব্দ
দলদলিয়া ইউনিয়নের (দক্ষিণ) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টি না থাকায় কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ধানচাষ তো করতে হবে। আমরা কৃষকদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সেচ দিয়ে ধান রোপণের পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি আমন মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন জানান, এবার উপজেলায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না থাকায় কৃষকদের সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি এখনো যে সময় আছে তাতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হবে।