লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চল চরমোহনা গ্রামে সাবিদ আলী মাঝি চার বছর ধরে আখ চাষ করছেন। এই আখ চাষ করে তিনি সংসার চালান। দুই ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়া ও এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে দেন। এছাড়াও একটি সেমি-পাকা ঘরও তৈরি করেছেন বৃদ্ধ বয়সী এই আখচাষি। সাবিদ আলী বলেন, ‘আখ চাষ করেই সেমি পাকা ঘর তুলেছি। এক ছেলে ও মেয়ের লেখাপড়াসহ বিয়ে দিয়েছি। স্বাবলম্বী হয়েছি।’
সাবিদ আলীর মতো উপকূলীয় এই উপজেলার প্রায় ৬’শ চাষি আখ চাষ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। তাতে দিন দিন আখ চাষের জমির পারিমাণও বেড়েছে। এই উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হচ্ছে। বছরে উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬০ মেট্রিকটন টন। বছরে অন্তত কোটি টাকার উপরে আখ বেচাকেনা হয় এই উপজেলায়। কৃষকেরা দিন দিন আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে আখ চাষে পরিশ্রম এবং বিনিয়োগ অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি। যেখানে মিল নেই, সেখানে চিবিয়ে খাওয়ার আখ চাষ হয়। ১৯৯০ সাল থেকে আখ চাষ শুরু হয়েছে।
আখ চাষের উন্নত জাত প্রবর্তন ও পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আখ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
১৯৯৩ সালে রায়পুরে মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হতো। এখন প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এতে ৬’শ চাষি সম্পৃক্ত রয়েছেন। আখ চাষে উপজেলার অনেকে স্বাবলম্বি হয়েছেন। ২০২৩-২৪ সালে উপজেলায় ১ হাজার ৪৬০ মেট্রিকটন আখ উৎপাদিত হয়। রায়পুরের চরমোহনা, চরআবাবিল,ঝাউডুগি, হায়দরগন্জ ও ক্যাম্পেরহাট এলাকায় বেশি আখ চাষ হয়।
বাসবাড়ীবাজার থেকে হায়দরগঞ্জ, উদমারা থেকে মিতালীবাজার, হজুমোল্লার ষ্টেশান থেকে ক্যাম্পেরহার ও চরআবাবিল সড়কের দুপাশে এখন প্রায় শত আখখেত। এসব খেত থেকে আখ তুলে গাড়িতে বোঝাই করে বাজারে নেয়া হয়। সাধারণত ফেব্রুয়ারী মাসেই আখ রোপণ করা হয়। ফলন দিতে প্রায় ৭ মাস লাগে অর্থাৎ আগষ্ট মাসে হয়। তবে আখের খেতের ফাঁকে বিভিন্ন সবজির চাষ করা হয়। তাই আখ বড় হতে হতে বছরজুড়ে অন্যান্য ফসল পাওয়া যায়। সাত মাসে বীজ লাগালে আখ কাটার পর তা থেকে এক বছর পর্যন্ত আখ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন- প্রিগোজিনের মৃত্যু নিশ্চিত করল মস্কো
চরআবাবিল গ্রামের যুবক জসিম (৩৮) জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেন চার বছর। পাশাপাশি তিনি খিরা ও টমেটুর চাষও করেন। তার দেখা দেখে ৫-৬ যুবকও চাষ করে।
চরমোহনা গ্রামের সাবিদ আলী ২০২০ সালে আখ চাষ শুরু করেছেন। এখন তিনি ৩০ শতক জমিতে আখ চাষ করেন। আখের চাষ করেই সেমি পাকা বাড়ি তুলেছেন। ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আখ চাষে অনেক লাভ ছিল। ব্যাপারীরা টাকা কম দেন। আগে একেকটি আখ ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এখন ৪০ টাকার বেশি দিতে চান না। নীজেও বাজারে ৫০-৮০ টাকা করে বিক্রি করি।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারি উদ্ধিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা এটিএম খোরশেদ বলেন, ‘রায়পুর উপজেলায় প্রতিবছর কোটি টাকার আখ বেচাকেনা হয়। কৃষকেরা দিন দিন আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আখ চাষে পরিশ্রম ও বিনিয়োগ অন্যান্য ফসলচেয়ে বেশি।