অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় বিলীন হওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন খাল। তিতাস নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রায় পাঁচ (৪.৮ কি.মি.) কিলোমিটারের টাউন খালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এই শহরের প্রাচীন বাণিজ্যিক কেন্দ্র। অথচ সেই খালই এখন অস্তিত্ব হারিয়ে বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন অংশে কচুরিপানা জমে খালে মিলছে না পানির দেখা!
বছরের পর বছর পার হলেও খালটি রক্ষায় পুনর্খনন বা সুপরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় খালের বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। আর যা অবশিষ্ট রয়েছে তাতেও বর্জ্য ফেলে ভরাট হওয়ার পথে। এতে করে একশ্রেণির ভূমিদস্যু সুযোগ বুঝে নানাভাবে খালের অংশ দখল করছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, ক্রমাগত দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসা খালটিকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তাদের মতে, সুপরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় স্বরূপে ফিরছে না শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এ খাল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালটিকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও পুনর্খননসহ নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন- হিলিতে কেজিতে ৬০ টাকা ঝাঁজ কমিয়েছে কাঁচা মরিচ
তিতাস নদীর কান্দিপাড়া পয়েন্ট থেকে খালটির উৎপত্তি। শহরের পানি নিষ্কাশনে খালটি ভূমিকা রাখলেও তা নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই। খালের দু’পাশে থাকা বিভিন্ন বাড়িঘরের বর্জ্য, বিভিন্ন দোকান, মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ফেলার জায়গা হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলা খালটি। ঘুটঘুটে কালো পানি আর চারপাশে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে যেন নাভিশ্বাস।
মাটির পলি জমে ভরাট হয়ে থাকা খালটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহিত না হওয়ায় পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। আর এতে হচ্ছে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর।
প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টাউন খালে এক সময় ছিল পানির প্রবল প্রবাহ। তিতাস নদীর কান্দিপাড়া থেকে গোকর্ণঘাট পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা খালটি দিয়ে একসময় বড় বড় নৌকায় করে ঢাকা, ভৈরব, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। আর এর স্বচ্ছ জলরাশি ছিল মাছ ধরা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরদের হৈ-হুল্লোড় আর সাঁতরে বেড়ানোর আদর্শ স্থান। গৃহস্থালির নিত্যদিনের কাজও করা হতো এই খালের জলে। কিন্তু এখন সে সবই অতীত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা আর নগর পরিকল্পনাবিদদের উদাসীনতায় খালটি প্রায় হারিয়েই গেছে। খালটিতে পানি নেই, বিভিন্ন জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। আর দখলদাররা তো রয়েছেই। খালটি ভরাট হতে হতে উঁচু হয়ে যাওয়ায় তিতাস নদীর যে পয়েন্ট থেকে খালের উৎপত্তি সেই পয়েন্টে ওয়াটার লেভেল সমন্বয় হচ্ছে না। এতে খালে পানির প্রবাহ নেই। তাই খালটিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনলে ঐতিহ্যবাহী খালটি আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে। আর নগরবিদদের আন্তরিকতা থাকলে ইতালির ভেনিস কিংবা বিদেশের বিভিন্ন নান্দনিক লেকের আদলে এটিকে গড়ে তুলতে পারেন।
আরও পড়ুন- সোনার দামে রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ১ হাজার ২৪৪ টাকা
এদিকে নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী’ বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, ‘কালের বিবর্তনে খালের অনেক অংশ এখন দখলদারদের কবলে রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও উদ্ধার হওয়া জায়গাগুলোতে আবারও দখলদাররা ফিরে আসছে।’
টাউন খালসহ শহরের বিভিন্ন খালের দুর্দশার কথা স্বীকার করে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস জানান, টাউন খাল পরিচ্ছন্ন করতে অভিযান চলছে। দ্রুতই খালটিকে পরিষ্কার করা হবে।
জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম বলেন, ‘টাউন খালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পৌরসভাসহ জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকবার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘এ ছাড়া সিএস দাগ ধরে একশ’র মতো অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অবশিষ্ট কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। এ ছাড়া টাউন খালের পাশাপাশি আখাউড়ার কালন্দি খালের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।’