রাজনীতি:
আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসতে চাইলে বিএনপি নেতাদের সেখানে চা খাওয়াতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তবে সরাসারি নয় বরং শর্তসাপেক্ষে এই দাওয়াতে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা খেতে চায় দলটি।
বেশ কয়েক বছর ধরে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি জানিয়ে আসছে, সেই দাবি পূরণ হলে দলটির নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চা খেতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অমানিশা: দুর্নীতি আর লুটপাটের খেসারত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চা খাওয়ার আগে বলুন যে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নেবেন। আমি গতকালও (শনিবার) বলছি, একমাত্র সমাধান হচ্ছে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে চা খেতে অসুবিধা নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কার্যালয়ে আসলে চা খাওয়াব। তার আগে বলে দেন, নিরপেক্ষ সরকার সিস্টেম এনে দিচ্ছি।’
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি তো বলে দিয়েছি যে তারা যদি প্রাইম মিনিস্টার অফিসও ঘেরাও করতে আসে, পুলিশ তাদের যেন বাধা না দেয়। বিশেষ করে বাংলামটরে বাধা দেয়া, এটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি।
‘আসুক না, হেঁটে হেঁটে যতদূর আসতে পারে; কোনো আপত্তি নেই। আমি তাদের বসাব, চা খাওয়াব, কথা বলতে চাইলে শুনব। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তবে বোমাবাজি ও ভাঙচুর করলে বাধা দেব। সেটা করলে তারা উপযুক্ত জবাব পাবে।’
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব ব্যবস্থা সরকার করেছে। কিন্তু জ্বালানি কোথায় থেকে আসবে সে ব্যবস্থা সরকার করেনি। জ্বালানির ব্যাপারে সরকার কোনো পরিকল্পনা করেনি। পরিকল্পনা না করার কারণে দেশের আজ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত রকমের রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট, আণবিক শক্তির পাওয়ার প্লান্ট সবকিছু তারা করছে।
‘আমাদের দেশে ৫১ ভাগ জ্বালানি আসে গ্যাস থেকে। কিন্তু সেই গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা গত ১৫ বছরে সরকার করেনি। এ সময়ে সরকার শুধু কী করে লুট করে টাকা বিদেশে পাচার কর যায় এটাই কেবল করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘লোডশেডিং গ্রামে বেশি হয়। সেখানে ৭-৮ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়। শহরের মানুষদের খুশি রাখার জন্য শহরে লোডশেডিং কম হচ্ছে। কারণ শহরের মানুষ একটু বেশি হইচই করে, আন্দোলন করে। এ জন্য শহরে কম লোডশেডিং হচ্ছে।
‘শহরের মানুষদের খুশি রেখে গ্রামে যারা কৃষি কাজ করে, ফসল ফলান তাদের লোডশেডিং বেশি দিচ্ছে। ফলে কী হবে? ফসল উৎপাদন কমে যাবে। ধান উৎপাদন কমে যাবে। খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে চলে যাবে। এভাবেই পতন অনিবার্য হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি প্রত্যেক দিন যে কষ্টটা পাই, আমি যখন উত্তরা থেকে প্রেস ক্লাবে আসি তখন। সরকার সড়কের নাম দিয়েছে বাস র্যাপিট ট্রানজিট এবং কিছুক্ষণ পরপর দেখি নিচে নেমে যাচ্ছে আবার ওপরে উঠে যাচ্ছে। আমার মাথায় ঢোকে না, র্যাপিড ট্রানজিটটা কীভাবে হবে?
‘এ ব্যবস্থার কারণে আব্দুলপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এই যে অব্যবস্থা, এই যে পুরোপুরিভাবে মানুষকে কষ্ট দেয়া, এর মূল কারণ হচ্ছে টাকা লুট করা।’
এ সময় খনার বচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। দেশের শাসনকর্তাদের দুর্নীতি, লুটপাট, অশিক্ষা, ব্যর্থতা সব মিলিয়ে দেশের মানুষর জীবন দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছে।’