নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলায় গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম খান মামুন এর বিরুদ্ধে ভিজিএফের চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিজিএফ কার্ডধারীদের চাল ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণ করার কথা থাকলেও তিনি তার নিজ বাড়িতেই নিজের অনুগত মানুষ দিয়ে বিতরণ করছেন। ভিজিএফ কার্ডধারীদের মাঝে কার্ড বিরতণ না করে নিজের তৈরি করা স্লিপ দিয়ে চাল বিতরণ করছেন। তাছাড়াও চাল পরিমাপ করার জন্য পরিমাপ যন্ত্রের এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বালতি। এতে সাধারণ মানুষের কপালে মিলছে ১০ কেজি চাল এর পরিবর্তে ৭-৮ কেজি চাল।
বুধবার (২১ জুন) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান এর নিজ বাড়ির উঠান ঘরে চাল বস্তা থেকে ডেলে বালতি দিয়ে মেপে চাল বিতরণ করছেন চেয়ারম্যান এর লোকজন। এতে কেউ পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছে না। আবার যারা পাচ্ছে তাদেরও বেশির ভাগ মানুষ প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে সেই চাল বিক্রি করছেন অন্যদের কাছে।
৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মন্জুল ইসলাম, আব্দুর রহিম ও ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বকুলা আক্তার সহ আরও কয়েক জন চাল কম পাওয়ার অবিযোগ করে জানান, আমরা সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে ১০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৭-৮ আট কেজি চাল পেয়েছি। বাকী চাল চেয়াম্যান ও তার লোকজন রেখে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- সিলেট-রাজশাহী সিটিতে ভোট শেষ, চলছে গণনা
এছাড়াও ৭নং ওয়ার্ডের পাঁচ-সাত জন মহিলা অভিযোগ করে বলেন, “আমরা সকাল থেকে এখানে অপেক্ষা করার পরও দুপুর পর্যন্ত এক মোটো চাউল না পেয়ে এখন কালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন বলেন, “আমি চেয়ারম্যানের লোকজনকে ২০-২৫ বস্তা চাউল এখান থেকে সরিয়ে নিতে দেখেছি এবং সেগুলো আমার ফোনে আমি ভিডিও করেছি।”
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নে ১৫৫৩ জন্য গরিব অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ১০ কেজি করে প্রায় সাড়ে ১৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করার হয়েছে। এতে গোবিন্দশ্রী অংশে ৬৫০ জনকে ইউনিয়ন পরিষদ হতে এবং কদমশ্রীতে চেয়ারম্যানের বাড়ি হতে ৯০৩ জনের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
১০ কেজি চালের মধ্যে সাত আট কেজি চাল পাওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম খান মামুন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই। কেউ যদি অভিযোগ করে থাকে তাহলে তাকে আমার সামনে এসে প্রমাণ করতে হবে এ বিষয়টি।”
পরিমাপ যন্ত্রের পরিবর্তে বালতি দিয়ে চাল মাপার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বালতিটিকে পরিমাপ যন্ত্রের মাধ্যমে মেপেই চাউল বিতরণ করেছি।”
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ (ট্যাগ অফিসার) এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি গৌরবন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের অংশের দায়িত্বের ছিলাম এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। তবে কদমশ্রী অংশে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সেটা আমি জানি না।
আরও পড়ুন- উল্লাপাড়ায় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাকে শুধুমাত্র বিতরণ দেখাশুনার জন্য রাখা হয়েছে তাছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই।
শতভাগ চাল বিতরণ ট্যাগ অফিসারের সামনে হওয়ার কথা থাকলেও ১৫৫৩ জন্য সুবিধাভোগীর মধ্যে আপনি মাত্র ৬৫০ জনের চাল বিতরণ করলেন আর বাকি ৯০৩ জন সুবিধাভোগীর চাল বিতরণ আপনার আড়ালে হলো এটি কি আপনার দ্বায়িত্বে অবহেলা নয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, আমাকে ১৫৫৩ জনের কোনো তালিকা দেখানো হয়নি। আমাকে মাত্র ৬৫০ জনের তালিকা দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শওকত জামিল বলেন, এ বিষেয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।