অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির সেনাবহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে, রাখাইন রাজ্যের থানদউয়ে বিমানবন্দরে একটি ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ভেঙ্গে পড়েছে। এ ছাড়া প্রবল ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে পানির প্রবাহ। ইতিমধ্যে সিতওয়েতে হাঁটুপানি জমে গেছে। বাসিন্দারা জরুরি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে।
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
মিয়ানমারে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর থেকেই বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসতবাড়ি বিশেষ করে টিনের বাড়িঘর এবং অস্থায়ী আবাস ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। অনেক বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে ঝড়ে। সিতওয়েতে মোবাইল টাওয়ার ভেঙ্গে পড়েছে ঝড়ে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, রবিবার (১৪ মে) স্থানীয় সময় দুপুরের পর ঘণ্টায় ২২০ কিমি গতিবেগ নিয়ে ঝড়টি সিত্তের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোবাইল অপারেটেরের টাওয়ার এবং গাছপালা উপড়ে পড়ে। উড়ে যায় ঘরের চালা। দালান-ঘরগুলোও কাঁপতে থাকে।
এছাড়া মোখার প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সিত্তে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় মোখাঃ লন্ডভন্ড সেন্টমার্টিন
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, ঝড় ও বন্যার কারণে বাড়িঘর এবং অন্যান্য অবকাঠামোগুলোর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, রাখাইনের উপকূলীয় এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৩ কিমি পর্যন্ত হতে পারে এবং জোয়ারের পানির উচ্চতা ২০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে।
রাখাইন রাজ্যের রাসায়ে পর্বতের একজন বাসিন্দা সকালে বিবিসিকে বলেন, ‘পুরো রাসায়ে পর্বতের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই শহরে চলে গেছেন। গ্রামে বৃষ্টি তেমন নেই। তবে অনেক বাতাস বইছে।’
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় মোখাঃ মূল আঘাত মিয়ানমারে; ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশ
দেশটির দুর্যোগপ্রবন এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের শহরে আশ্রয় নিয়েছে। সকাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মিয়াকু শহরে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনী।
সকালে দেশটির আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূল থেকে উত্তর পূর্বের চিন রাজ্য, ম্যাগওয়ে ও সাগাইং এবং কাচিন পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
এ সময় সাগাইং, মান্দালে, ইরাবতি এবং চিন রাজ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১১২ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার এবং নেপিদো, বোগো, ইয়াঙ্গুন এবং কাচিন শান এবং কায়াহ অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৪ থেকে ৯৬ কিলোমিটার হতে পারে।
আরও পড়ুন- জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা নেইঃ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী
এদিকে মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারে কর্তব্যরত জাতিসংঘ। ইতিমধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিচু এলাকাগুলো থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্য ও সংঘাত সহিংসতার কারণে মানবিক সহায়তার ওপর টিকে আছে। ফলে এই মানুষগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখা মরার ওপর খাড়ার ঘা এর মতো দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংস্থাটির আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস এবং বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে জরুরি ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জরুরি তহবিলের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।