রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রবিবার (৭ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রশিদুল আলম প্রতিবেদন দাখিলের এ দিন ধার্য করেন।
এদিন এ মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এই মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেনি। তাই বিচারক প্রতিবেদনের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত এ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
আরও পড়ুন- কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ নেতা আকরাম
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৮ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়- এদের মধ্যে সাক্ষী ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার তাদের জবানবন্দিতে জনৈক ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে গত ২৭ ডিসেম্বর আদালত এ মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় থেকে উত্তোলন করে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঢাকার সিএমএম বরাবর প্রেরণ করেন।
এই মামলায় গত ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবদুর রউফ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের নামে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মোঃ সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খান কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম, অলি আহমেদ ওরফে জনির নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া নাম-ঠিকানা জানতে না পারায় আরও ১৫-২০ আসামির নাম অভিযোগপত্রে আসেনি। এতে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়।
আরও পড়ুন- আপনি আমাদের অনুপ্রেরণাঃ শেখ হাসিনাকে ঋষি সুনাক
ডিবির অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজের অংশ নিতে যান রাষ্ট্রদূত। যেখানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমও অংশ নেন।
খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। নৈশভোজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তারা মার্সা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করেন। এতে বার্নিকাট দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন- শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান
সেই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মামলার বিচার শুরুর পর রাষ্ট্রপক্ষে ছয়জন সাক্ষ্য দেন৷ তাদের সাক্ষীতে ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। তাই মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী এই আদেশ দেন।
এ ঘটনায় ওই বছর ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, ওই রাতে ৩০-৪০ জন দুর্বৃত্ত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা করে। তারা বার্নিকাটের ড্রাইভার ও বদিউলের ছেলের ওপর আক্রমণ করে। তারা বার্নিকাটের গাড়ির পেছনে পেছনে ধাওয়া করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পিস্তল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে আগুন দেওয়ার উসকানি দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। দলটি বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেন। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যান।