মহান মে দিবস (১ মে) উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন মহান মে দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে রক্তাক্ত আন্দোলনে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আত্মাহুতি দেওয়া বীর শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন- নোমান-রাকিব হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল লক্ষ্মীপুর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন এবং পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেন।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, “মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে যেকোনও শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। সব খাতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন- রোকাইয়াকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৪ লাখ টাকা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও সেফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা-২০১৩, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল শিল্পসম্পর্ক এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিক ভাইবোনদের যেকোনও সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্প লাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। নারী শ্রমিকদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দুটি বহুতল শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়াসের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন- আত্রাইয়ে রূপসী নওগাঁর ঈদ উপহার পেল একশ পরিবার
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে আমাদের সরকার শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ বিতরণসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। রফতানিমুখী পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী ‘মহান মে দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্যও কামনা করেন।