গতি নেই পূর্বাঞ্চলীয় জোনের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পে। গত ১০ বছরে প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। প্রকল্পে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানি এ পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। এতে ১১৭ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর চালু হয় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি। বাজেট স্বল্পতায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এক সময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রেলপথটি। ঝুঁকিপূর্ণ রেল লাইনে ঘন ঘন রেল দুর্ঘটনা ও রেলপথটি ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী এই কারণ দেখিয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। পণ্য পরিবহন এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ২০১০ সালে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার বন্ধ লাইনটি চালুর উদ্যোগ নেয়। ২০১১ সালে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। অনুমোদিত প্রকল্প পরবর্তীতে সংশোধন করে ৫৪৪ কোটি টাকা করা হয়। কাজের মধ্যে রয়েছে- কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাহবাজপুর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইন মিলে মোট ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ ব্রডগেজ ও মিটার গেজের দ্বৈত লাইন ছাড়া রয়েছে ছয়টি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ এবং ৫৯টি সেতু-কালভার্ট। প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে রেলপথটি পুনর্বাসনের জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আর চুক্তির মেয়াদ কাজ শুরুর তারিখ থেকে ২৪ মাস। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়াু-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রেলওয়ে সুত্র জানায়, কাজের মেয়াদ ধরা হয় দুই বছর। ২০২০ সালের মে মাসে শেষ হয় কাজের মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হয় মাত্র ১৭ শতাংশ। এরপর পুনরায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ তিনবারে দুই বছর বৃদ্ধি করা হলেও কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। ২০২২ সাল পর্যন্ত পুনরায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও গত ডিসেম্বর থেকে আরও ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কাজের পরিমাণ এখনো ২৫ শতাংশেই আছে।
এই প্রকল্পে নিয়োজিত বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে বন্যার জন্য ব্রিজ-কালভার্টের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে কাজ চলমান।
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হায়দার আলী বলেন, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানিকে তিন দফা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চলমান অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ হবে।