নতুন পাঠ্যক্রমের কোনো বইয়ে লেখা নেই মানুষের পূর্ব পুরুষ বানর, একটি গোষ্ঠী এটি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের পেছনে ডাকাতিয়া নদীতে ব্র্যাক শিক্ষা তরী প্রকল্প উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মানুষের পূর্বপুরুষ বানর, নতুন পাঠ্যবইয়ের কোথাও এমনটি বলা নেই। এ বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। বইয়ে মানুষ আদিযুগে দেখতে কেমন ছিল, এখন কেমন সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও বানর নেই। সেখানে একটি বানর বসিয়ে দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন- গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা
মন্ত্রী বলেন, একটা শিক্ষাক্রমে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আমাদের শুধুমাত্র মাধ্যমিকেই ৬৫টি বই নতুন করতে হয়েছে। এ বইগুলোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সমান ভাবে দেখতে পেরেছি তা কিন্তু নয়। কিন্তু তারপরও সেখানে যদি কোনো ভুল থেকে থাকে তা অনিচ্ছাকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবুও কেউ যদি ইচ্ছা করে করে থাকে তার জন্য আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তবে এখন পর্যন্ত যেই ভুলগুলো বের হয়েছে তা ১০ বছর আগের বইয়ের ভুল।
নতুন পাঠ্যবই নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন সময়ের মানুষের ছবি দেওয়া আছে। কোথাও বানর নেই, কিন্তু একটি বানরের ছবি লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি সবাইকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।
তিনি বলেন, বইতে উল্লেখ করা হয়েছে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করছে মানুষ বানর থেকে হয়েছে কি না? তখন ওই শিক্ষক তাকে উত্তর দিয়েছেন, ‘না’। বানর বা শিম্পাঞ্জি মানুষের পূর্বপুরুষ এ কথাটিই ঠিক নয়। বইয়ে তিনবার এ বিষয়টি বলা হয়েছে। অথচ একটি গোষ্ঠী এ বিষয়টিকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের বইয়ে যে ছবিটি আছে সে ছবিটিতে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের মানুষ—আদিযুগে মানুষ দেখতে কেমন ছিল, এখন দেখতে কেমন।
আরও পড়ুন- ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের এমডি
ব্র্যাকের খেলাভিত্তিক এবং অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা তরীতে বিজ্ঞান, গণিত ও মূল্যবোধ এ তিন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সহজলভ্য উপাদান ও ছবির মাধ্যমে শেখানো হয়। আগামী ১০ দিন এই শিক্ষা তরী চাঁদপুরে অবস্থান করার কথা রয়েছে।
ব্র্যাকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বাচ্চাদের আমরা ভাষা, অঙ্ক, বিজ্ঞান শিখাতে চাই। তারা যেন দক্ষ, যোগ্য সত্যিকারের মানবিক মানুষ হয়ে উঠতে পারে তার জন্য একই সঙ্গে মূল্যবোধও শিখাতে চাই। সৃজনশীল হওয়ার জন্য করে করে শিখতে হবে। মুখস্থ করে সৃজনশীল হওয়া যায় না। যেটা করে করে শিখবে তখন মুখস্থ করতে হবে না, এর মাধ্যমে বিষয়টিকে আত্মস্থ করা যায়। যা আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে চালু করতে চাইছি। আমরা যে জিনিসটা আমাদের শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছি তা-ই এখানে করা হচ্ছে। হাওর অঞ্চল, প্রত্যন্ত চরাঞ্চলসহ যেখানে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, সেখানে স্কুলই বাচ্চাদের কাছে চলে আসছে। এ ধারণা নিয়ে ব্র্যাক অনেক আগে থেকেই হাওর অঞ্চলে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে পারবে।
অনুষ্ঠানে চাঁদপুর পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান, শিক্ষা কর্মসূচির প্রোগ্রাম প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াছিন আরাফাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান শোভনসহ অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।