নাটোরের বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের করা অপমান, অসৌজন্যমূলক আচরণে বিস্মিত ও হতাশ হয়েছেন ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর প্রধান শিক্ষক কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর ‘বেতন বকেয়া’ থাকার কারণে রাগান্বিত হয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর খাতা ও প্রশ্নপত্র কেড়ে নিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন।
এতে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পেয়েছে এবং তাদের মধ্যে অভিমান ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনাকে অপমানের ও লজ্জার বলে দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। এ সময় শিক্ষকরা উত্তরপত্র (খাতা) ও প্রশ্নপত্র দেন। এরপর আকস্মিকভাবে প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান পরীক্ষার হলে এসে কে কে বেতন পরিশোধ করেনি জানতে চান। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বেতন বকেয়া আছে বলে জানান। এতে রাগান্বিত হয়ে প্রধান শিক্ষক খাতা ও প্রশ্নপত্র কেড়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে বের করে দেন।
অভিভাবক মোসলেমউদ্দিন মন্ডল, রঞ্জিত কুমার কুন্ডু, মুকুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, বেতন বকেয়া যার, তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এ ক্ষেত্রে যাদের পরিশোধ রয়েছে তাদের কাছ থেকে খাতা-প্রশ্নপত্র কেড়ে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ ছাড়া বেতন আদায় করার জন্য এ আচরণ রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা ও আপত্তিকর।
আরও পড়ুন- সমাবেশে খালেদা জিয়া যোগ দিলে আদালত ব্যবস্থা নেবেন
ওই বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক লাভলী বেগম জানান, খাতা ও প্রশ্নপত্র বিতরণের আগে যদি প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা না নিতে নির্দেশ দিতেন তাহলে হয়তো ঠিক হতো। এতে করে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে এবং আমাদেরকে সারাদিন পরিশ্রম করে আবার প্রশ্ন তৈরি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া এতে বেশ পরিমাণ অর্থও অপচয় হলো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান এই বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী বেতন, পরীক্ষা ফি পরিশোধ করেনি। শেষ পরীক্ষা দিনেও তারা পরিশোধ করেনি। তাই পরীক্ষা একদিন পিছিয়ে রোববার করা হয়েছে।’
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষকের ভাগনি জামাই ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন সুলতানার স্বামী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেতন বকেয়া রয়েছে। তাদের মানসিক চাপের কথা চিন্তা করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে রোববার করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন- এসএসিসিজেএফ এর আত্মপ্রকাশ
প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি, ঠিকই করেছি। আপনি পত্রিকার পাতায় বড় করে আমার বিরুদ্ধে নিউজ ছাপিয়ে দিন।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধান শিক্ষক কাউকে না জানিয়ে একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এ কাজটি করেছেন। তিনি অবশ্যই এই কাজটি ঠিক করেননি। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। আগামী রোববার ওই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রউফ জানান, ঘটনাটি সরকারি বিধিমালার পরিপন্থী। প্রধান শিক্ষক এভাবে পরীক্ষা বন্ধ করতে পারেন না। আগামী রোববার জেলা মাধ্যমিক অফিসার স্যারে সঙ্গে মিটিং করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, প্রধান শিক্ষক যা করেছেন তা কোনোভাবেই সঠিক কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।