বিশ্বের জ্বালানি সংকটের পরিস্থিতিতে আদিযুগে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেষে ভেন্নার তেল আর রেডির তেল দিয়ে কুপিবাতি জ্বালাতে হবে। এখন থেকে সবাই প্রস্তুত হন চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে। কাঠ-খড়ি পুড়িয়ে রান্না করতে হবে। জাতিসংঘ সম্মেলন ও যুক্তরাজ্য সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বের জ্বালানি সংকটের কথা চিন্তা করে সবাইকে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে সবাইকে আদিযুগে ফিরতে হবে। শেষে ভেন্নার তেল আর রেডির তেল দিয়ে কুপিবাতি জ্বালাতে হবে। এখন তো কেউ ভেন্নার তেল চিনবে না। রেডির তেলও চিনবে না। রেডির তেল খুব থিক (পাতলা) একটা তেল। অনেকক্ষণ জ্বলে। ভেন্না গাছ তো সবুজ। সবুজ কাটা কাটা ফল হয়। সেটা থেকে তেল তৈরি করে সেই তেল দিয়ে বাতি জ্বালানো হতো। কুপি বাতিও তো বোধহয় চিনবেন না। পিদিম জালায়, চেরাগ চালায়। এটা দিয়ে হারিকেন জ্বালাতে হবে। সেটাতে ফিরতে হবে।
আরও পড়ুন- জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ঃ তদন্ত শুরু করেছে পিজিসিবি কমিটি
তিনি বলেন, বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে, গ্যাসের অভাব আমাদের যতটুকু আছে তা ব্যবহার করছি। নতুন করে সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেটুকু পারি আমরা চালাচ্ছি। উন্নত দেশগুলোর মানুষের যে দুরবস্থা, সেখানকার মানুষ সব থেকে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দেশেও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকে সবাই প্রস্তুত হন চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে। হাঁড়িতে কাঠখড়ি পুড়িয়ে রান্না করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাটি ও মানুষকে নিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারলে কোনও অসুবিধা হবে না। আমরা খেয়ে-পরে থাকতে পারবো। মানুষকেও খাওয়াতে পারবো। এই আশ্বাস দিতে পারি।
সরকার খাদ্যের ওপর জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ে বসেছিলাম। আমাদের কী কী করণীয়? একটা আলাদা বাজেটও রেখেছি। এই বাজেটটি হবে শুধু খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া আছে। যার যার জায়গা আছে চাষাবাদ শুরু করে দেন। আদিযুগে ফেরত যান। পেট ভরে খেতে পারবেন। শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। আওয়াজ-টাওয়াজ পাবেন না। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ চলার জন্য যতটুকু বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেটা দিতে পারবো। সেটা পাবেন।
আরও পড়ুন- জলবায়ু সমঝোতা আলোচনায় বাংলাদেশের ভূমিকা দুর্বল
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচনা করা হলেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এখন সেই অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, আবহাওয়া এসব কথা বলে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে এত প্রচারণা চালিয়ে এখন আবার সেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিরে যাচ্ছে। জার্মানির মতো দেশ থেকে শুরু করে অনেকেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিরে গেছে। তবে, আমাদের ওপর অনেক চাপ, অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু কোনও চাপের কাছে মাথা নত করিনি। দেশের জন্য যেটা প্রয়োজন তা করবো। হ্যাঁ, এজন্য দেশের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন আছি। সেটা যে হচ্ছে (পরিবেশ দূষণ) না, তার প্রমাণও দিয়েছি। আন্তর্জাতিক অনেক ফোরামে প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হয়েছে। অনেকের সঙ্গে তো আমার বিতর্কও হয়েছে। এখন তারা কী বলবেন? সামনে পেলে জিজ্ঞাস করতাম এখন কী বলবেন? আবার তো সেই আদি যুগেই ফিরে যেতে হলো।