সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. আকবর আলি খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বাদ জুমা গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
এ সময় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান, সাবেক সিইসি রকিব উদ্দিন, আকবর আলি খানের ভাই কবিরউদ্দিন খানসহ তার সাবেক সহকর্মীরা দাফনে অংশ নেয়।
আরও পড়ুন- আকবর আলি খানের জানাজা সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আকবর আলি খানকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ড. আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাই স্কুলে তার পুরো বিদ্যালয় জীবন পার করেন। পরে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন ও ১৯৬১ সালে আই এস সি পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।
সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭০ সালে হবিগঞ্জ মহুকুমার এসডিও হিসেবে পদস্থ হন। তিনি তার এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচন পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সরকার তার অনুপস্থিতিতে তার বিচার করে এবং ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সরকারি চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। পরে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হওযার আশঙ্কায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সঙ্গে একযোগে পদত্যাগ করেন। তিনি রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আকবর আলি খানের লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টি। তার ‘হিস্টোরি অব বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশের ইতিহাস এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বইটিতে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক উত্থান ও পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি দেশে ইসলাম ধর্মের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার অর্থনীতি বিষয়ক বই ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ তুমুল আলোচিত হয়। এতে তিনি সরস ও প্রাঞ্জল ভাষায় অর্থনীতির জটিল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন।