বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই সমঝোতা স্মারকগুলো সই করা হয়।
ভারতের নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ২ দেশের সই হওয়া সাতটি সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে অবগত করা হয়।
সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে-
(১) রহমিপুর হয়ে বাংলাদেশের সিলেটে কুশিয়ারা নদী থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক।
(২) ভারতের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) এবং বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারক।
(৩) ভারতের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
(৪) বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের ভারতীয় রেলওয়ের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
(৫) বাংলাদেশ রেলওয়ের আইটি বিষয়ক সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
(৬) প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
(৭) মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক।
বাংলাদেশ-ভারতের অংশীদারিত্বমূলক কাজ এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে: প্রধানমন্ত্রী
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদারিত্বমূলক কাজ শুধু এই দুই দেশের নয়, এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ- ভারত ৫৪টি নদী দ্বারা সংযুক্ত। দুই দেশের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সম্মিলিত কল্যাণের জন্য সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, গত এক দশকে উভয় দেশই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। আশা করি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইসহ সকল অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজকের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ফলপ্রসূ আলোচনা বলে অভিহিত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এই বৈঠকের ফল উভয় দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে। বৈঠকে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও ঋণের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার ও জনগণের সমর্থনের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
আগামী ২৫ বছরে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে: নরেন্দ্র মোদি
আগামী ২৫ বছরে ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২ দেশের ডেলিগেশনের সদস্য, সাংবাদিক বন্ধু, নমস্কার। সবার প্রথমে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাই। গত বছর আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর, আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী একসঙ্গে পালন করেছি। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আমরা প্রথম মৈত্রী দিবস পালন করেছি পুরো পৃথিবীতে।
বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার মন্তব্য করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রীর সফর আমাদের স্বাধীনতার মহোৎসবের মধ্যে হচ্ছে। আমার পুরো বিশ্বাস আছে, আগামী ২৫ বছরে ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। গত কয়েক বছরে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রতিটি ক্ষেত্রে খুব দ্রুতই বেড়েছে। আজ বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার এবং সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কেরও নিরন্তর উন্নতি হচ্ছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি সব দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে ও দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছি।
মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা
ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লির রাজঘাটে এই শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু এবং আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি। গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো- সামগ্রিকভাবে আমাদের জনগণের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনীতির উন্নয়ন। এই ইস্যুতে আমি মনে করি আমাদের ২টি দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। এতে শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মানুষই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ উন্নত জীবন পেতে পারে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু। আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের, বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা আমরা সবসময় স্মরণ করি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি।’
বন্ধুত্ব যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে-
ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে স্বাগত জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। সেখানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি এ সফরে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দুই দেশের উন্নয়ন এবং আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। আমরা সবসময় এই সম্পর্ক বজায় রাখি।’ ভারত আমাদের বন্ধু উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য আনন্দের। বিশেষ করে আমরা সবসময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করি।’
ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার-
মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। এর আগে সোমবার সকালে বিশেষ বিমানে ভারতের উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। ভারতে পৌঁছালে দেশটির রেল ও টেক্সটাইল প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোস তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগায় যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় ভারতের অন্যতম বড় শিল্প গ্রুপ আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। তার ভারত সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের বাসায় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।