শকুন রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে শকুনের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয় যা এশিয়ার মধ্যে প্রথম। এরপর আরেক ক্ষতিকর ওষুধ কিটোপ্রফেনও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এসব কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। মন্ত্রী বলেন, কিটোপ্রফেন নিষিদ্ধের পর নিরাপদ ঔষধ মেলোক্সিক্যাম ও টলফামেনিক অ্যাসিডের ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে যা শকুন রক্ষায় একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বন অধিদফতরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় সব ঔষধ কোম্পানিকে ক্ষতিকর কিটোপ্রফেন উৎপাদন ও বিপনন বন্ধে সরকারি নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শকুন সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞানভিত্তিক যেকোনো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেলে তা বাস্তবায়নে সহায়তা করা হবে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, এছাড়া, বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি গঠন, সরকারিভাবে দুটি শকুন নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা এবং দশ বছর (২০১৬-২০২৫) মেয়াদি বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনার অনেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছি এবং বাকি কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করতেও আমরা বদ্ধপরিকর।
বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে ৭ম ও ৮ম আঞ্চলিক পরিচালনা কমিটির সভায় সরকার গৃহীত বিভিন্ন কার্যকর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার শকুন সংরক্ষণের একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। শকুনের ডানায় লাগানোর জন্য লাল-সবুজ পতাকার আদলে বিশেষ ট্যাগ তৈরি করা হয়েছে। এই উইং ট্যাগের পাশাপাশি এ বছর নতুন প্রযুক্তি স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শকুনের গায়ে ট্যাগ লাগানোর পরিকল্পনা আছে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের শকুনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে যা শকুন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের সকলের স্বার্থে, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে অবশিষ্ট শকুনগুলোকে রক্ষায় আমাদের সকলকেই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণলয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন। সভাপতিত্ব করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডশেনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, সুফল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায় ও বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইউসিএন, বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার এবিএম সারোয়ার আলম।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী শকুন সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আয়োজিত পোস্টার তৈরি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শকুন সমৃদ্ধ এলাকায় আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।