রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার আর বিশ্বসেরা প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘এর রক্ষণাবেক্ষণে দেশটি বন্ধুপ্রতীম দেশ বাংলাদেশকে আজীবন সেবা দিয়ে যাবে। প্রকল্পটি নির্মাণের সময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর বিশ্বসেরা প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের নিয়ম আর সুপারিশ পুরোপুরি পালন করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রাশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পের পরিচিতি তুলে ধরেন পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ শৌকত আকবর।
আরও পড়ুন— রূপপুরে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অনলাইনে যোগ দিয়েছেন হাসিনা-পুতিন
পুতিন বলেন, ‘রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে না, এই প্রকল্পের পুরো লাইফ সাইকেলে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকবো। পারমাণবিক জ্বালানির টেকসই সরবরাহ করা কারিগরি সেবা ও ব্যবহৃত জ্বালানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রাশিয়া গ্রহণ করেছে।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে উত্তরণ উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘এ প্রকল্পে আমাদের দুই দেশের স্বার্থ জড়িত এবং এটি পরস্পরের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও গভীর করেছে।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ভ্লাদিমির পুতিন।
বাংলাদেশকে পরীক্ষিত বন্ধু অভিহিত করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও পরস্পরের স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত হচ্ছে। রাশিয়া বাংলাদেশ সম্পর্ক ৫০ বছর আগে রচিত হয়েছে। যখন ৭০ দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বে ও পরে নতুন রাষ্ট্র গোড়াপত্তনে সমর্থন প্রদান করেছে। যে দেশগুলো সর্বপ্রথম স্বীকার করেছে রাশিয়া তার অন্যতম ছিল। এরপর থেকেই বড় শিল্প আর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণে সহযোগিতা করেছে রাশিয়া।’
আরও পড়ুন— পরিবেশ নিয়ে আমরা কতটা সচেতন?
গত বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কথা স্মরণ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মস্কো সফরের সুবর্ণজয়ন্তীর কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার আর বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো যৌথ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন।’
পুতিন বলেন, ‘২০১৩ সালে রোসাটম বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ শুরু করে। গবেষণার কাজ শেষ হওয়ার পর ২০১৭ সালে চুল্লির প্রথম ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৬ সালে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কার্বন নির্গমন করবে না, যা পরিবেশ ও মানুষের মানুষের জন্য ভালো হবে বলেও উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাছাড়া ভারতীয় বন্ধুরাও আমাদের সাহায্য করছে। দুই দেশের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন— তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপরে ওঠার শঙ্কা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা কেন্দ্রটির মূল প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শুধু পারমাণবিক কেন্দ্রে নয়, অন্যান্যে শিল্প ক্ষেত্রেও তারা কাজ করতে পারবে।’
এরপর পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথম ব্যাচের হস্তান্তর সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। এরপর ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি এজেন্সির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি। এরপর রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বক্তব্য রাখেন।