বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে তাকে আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন তাহলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৭ সেপ্টেম্বর (স্থানীয় সময়) যুক্তরাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি নেওয়া সাক্ষাৎকারটি শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এজন্য তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান তারা- এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদের (বিএনপি) যদি চাইতে হয় তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন- দেখি, কে নির্বাচন ঠেকায়ঃ ওবায়দুল কাদের
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে ‘তাকে আবার জেলে যেতে হবে, কোর্টে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন যে তাকে (খালেদা জিয়া) আমি বাসায় থাকার পারমিশনটা দিয়েছি, এটা আমাকে উঠিয়ে নিতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে, কোর্ট যদি রায় দেয় তখন সে যেতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যেটুকু করতে পেরেছি, আমার যেটুকু ক্ষমতা আছে- তাকে সাজাটা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার পারমিশন (অনুমতি) দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা… সে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।’
ভোটের অধিকারের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। অনেক নেতাকর্মী রক্ত দিয়েছে, এই ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যত ধরনের সংস্কার দরকার সেটা আমরাই করেছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। মানুষের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’— এই স্লোগান আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। সে ক্ষেত্রে ভোট নিয়ে হঠাৎ স্যাংশন দেওয়ার কোনো যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী আমার কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থার কেউ যদি কোনো অন্যায় করে তার কিন্তু বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না।
এদিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। গত ৯ আগস্ট থেকে তিনি হাসপাতালে। এরমধ্যে তিন দফায় তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তিনি অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। তার লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন- ডেঙ্গুতে ৯ মৃত্যুর দিনে হাসপাতালে ২৩৫৭
এ অবস্থায় সবশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দি হন তিনি। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।