নির্বাচনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাসড়কে ভটভটি, নছিমন ও করিমনের মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যান চলাচল বন্ধের দিকে যাবে না সরকার। বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় এলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে, এসব যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল দেশের মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার ইজিবাইক চলাচল থেকে বিরত রাখতে আদেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে এখনো বন্ধ হয়নি।
রবিবার (৩০ জুলাই) অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, নির্বাচনের আগে এসব যান বন্ধের দিকে যাবে না সরকার। কমিটির ১৯তম বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আজ অনুষ্ঠিত ২০তম বৈঠকে ওই আলোচনার বিষয়টি কার্যবিবরণী আকারে উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কমিটির সদস্য ও সরকার দলীয় এমপি অ্যাডভোকেট আবু জাহিদ আগের বৈঠকে নছিমন ও করিমন বন্ধের প্রসঙ্গটি তোলেন। তিনি মহাসড়কে নছিমন, করিমন ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ বিভাগের অংশগ্রহণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন- এসএসসি পরীক্ষায় চমক দেখাল যমজ ৩ ভাইবোন
জবাবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় জনপ্রতিনিধিরাই চান না নছিমন ও করিমন চলাচল বন্ধ হোক।’ সবার সহযোগিতা পেলে এবং দল ক্ষমতায় এলে পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় ছিল না। অনির্ধারিত আলোচনার অংশ হিসেবে উঠেছিল। বৈঠকে এ বিষয়ে কোনও সুপারিশ আসেনি।’
এর আগে সংসদীয় কমিটি একাধিকবার মহাসড়ক থেকে এসব যান বন্ধের সুপারিশ করেছিল কমিটি। সর্বশেষ গত বছর ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও নছিমন-করিমন বন্ধের সুপারিশ করে কমিটি।
কমিটির এ সুপারিশের পর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে গত মার্চে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত করতে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। ওই নীতিমালায় ১২৬ সিসির কম ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল মহাসড়কে চলতে পারবে না বলে প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি মহাসড়কে মোটরসাইকেলের পেছনে কোনও যাত্রী যেতে পারবে না বলেও সুপারিশ আসে।
তবে, ওই নীতিমালায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সড়কে যেমন গাড়ি চলে তেমনি মোটরসাইকেলও চলে। মানুষ দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এর গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে চালকেরা নিরুৎসাহিত হবে।’
আরও পড়ুন- নাটোরে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা
তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন।
এরপর নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর পদ্মা সেতুকে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই দিনই একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সদস্য এনামুল হক, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মোঃ ছলিম উদ্দীন তরফদার, সেখ সালাহউদ্দিন ও রাবেয়া আলীম অংশগ্রহণ করেন।